কৃত্রিম উপায়ে টেংরা পোনা উৎপাদনে সফলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে যখন দিন দিন দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেসময় কৃত্রিম উপায়ে বিলুপ্তপ্রায় টেংরা (Mystus vittatus) মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মত এ সফলতা অর্জন করেছেন।

আইইউসিএন (২০১০) এর তথ্য মতে, দেশের বিলুপ্তপ্রায় ৫৬টি ছোট মাছের মধ্যে টেংরা একটি অন্যতম প্রজাতি। এক সময় দেশের নদ-নদী ও খাল-বিলে প্রচুর টেংরা মাছ পাওয়া যেত। আবাসস্থল বিনষ্ট হওয়ার কারণে এবং ধানি জমিতে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এর প্রাকৃতিক প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে টেংরা মাছ মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদের ওপর ২০১৪ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেন। ওই গবেষণা দলে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খন্দকার রশীদুল হাসান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শওকত আহমেদ ও মালিহা হোসেন মৌ।

গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এর পোনা উৎপাদন এবং নার্সারি ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি মাছ (২০-২২ গ্রাম) থেকে ৪০-৪৫ হাজার পোনা উৎপাদিত হয়েছে।

উৎপাদিত পোনা চাষিদের মাঝে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি মন্ত্রী ও সচিবের উপস্থিতিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রদর্শন করা হয়। এ সময় বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের কাছে ওই প্রযুক্তি হস্তান্তর করেন।

বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খরাপ্রবণ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি পুকুরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে টেংরা মাছ চাষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের সংরক্ষণ ও চাষাবাদ কৌশল উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ধারাবাহিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে।

ইতিমধ্যে ১৬টি মাছের (যেমন-পাবদা, গোলশা, বাটা, মেনি, গনিয়া, কালিবাউশ, গুজি, আইড়, ফলি, মহাশোল, শিং, মাগুর ইত্যাদি) পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। ফলে সাম্প্রতিককালে এসব মাছের প্রাপ্যতা বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এদের জিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

টেংরা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন বাংলাদেশে একটি নতুন সংযোজন বলে ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান।

  •  
  •  
  •  
  •