নারায়ণগঞ্জে নিলামে উঠানো নিরাপদ মাছে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা

নিউজ ডেস্কঃ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিলামে উঠানো প্রকল্পের নিরাপদ মাছে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার (৮ এপ্রিল ২০২৩) USAID এর অর্থায়নে ‘Feed the Future Innovation Lab for Food Safety’ কর্তৃক পরিচালিত প্রকল্প ”Enhancing Food Safety in Fish and Chicken Value Chains of Bangladesh” এর অধীনে অধিকতর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত রুই মাছের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে অংশ নেন বিভিন্ন আয়স্তরের প্রায় অর্ধশতাধিক ক্রেতা। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, অধিকতর নিরাপদ মাছ ক্রয়ে ভোক্তাদের মনোভাব বা আগ্রহ কেমন এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত মাছ থেকে অধিকতর নিরাপদ মাছ প্রাপ্তিতে ভোক্তারা কত দাম প্রদান করতে ইচ্ছুক তা জানা।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও  নিলাম প্রক্রিয়া বিষয়ে বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের পরিচালক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমান।

প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত রুই মাছ এবং অধিকতর নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষকৃত রুই মাছ পৃথক পাত্রে প্রদর্শন করা ছিল নিলামের উদ্দেশ্য। নিলামের প্রথম পর্বে মাছের আকার ও রং দেখে ক্রেতাদেরকে মাছের দাম নির্ধারণ করতে বলা হয়। এ পর্বে কোন মাছ কি পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়েছে তা গোপন রাখা হয়।

এসময় উপস্থিত ক্রেতাদের সামনে গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্যগুলো তুলে ধরেন প্রকল্পের কো-পিআই ও  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের প্রফেসর ড. কেএইচএম নাজমুল হোসাইন নাজির। গবেষণায় অধিকরতর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত মাছে ভারী ধাতুর উপস্থিতি অনুমিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম, এমনকি প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত মাছ থেকেও তুলনামূলক কম পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে নিরাপদ উপায়ে চাষকৃত মাছে ক্ষতিকর জীবানুর উপস্থিতি প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত মাছের তুলনায় একবারেই কম এবং কখনও কখনও অনুপস্থিতও ছিল।

নিলামের দ্বিতীয় পর্বে মাছের গুণাগুণ বিষয়ে গবেষণাগারে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রদর্শিত মাছের মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়।

নিলাম প্রক্রিয়া শেষে জানা যায় যে, ভোক্তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত রুই মাছের চেয়ে অধিকতর নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষকৃত রুই মাছ  ১৬% অধিক দামে ক্রয় করেন, যা ক্রেতাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্যের প্রতি আগ্রহের একটি বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে অধিকতর নিরাপদ মাছের বাজার তৈরীর জন্য অংশগ্রহণকারী ভোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (১) ব্র্যান্ডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, একই সাথে quality assurance certification এর ব্যবস্থা করা; (২) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভোক্তাদের মাঝে সতেচনতা বৃদ্ধির জন্য dissemination program এর আয়োজন করে মাছ বিক্রয় করা; এবং (৩) অনেকে নিরাপদ মাছ প্যাকেটজাত করে বিক্রির ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন।

ফলাফল ও ভোক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিবেচনায় নিয়ে নীতি-নির্ধারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে নিরাপদ মাছ চাষের বাণিজ্যকরণে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গবেষকবৃন্দকে আহ্বান জানান।

প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের Texas State University এবং বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এর একদল গবেষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সি টির প্রফেসর ড. মদন এম দে প্রধান গবেষক  এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সাইদুর রহমান বাংলাদেশ অংশের নেতৃত্ব দেন। গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বাকৃবির প্রফেসর ড. মো: আখতারুজ্জামান খান, প্রফেসর ড. কে. এইচ. এম. নাজমুল হুসাইন নাজির, প্রফেসর ড. আব্দুল আলিম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী প্রফেসর ড. সামিনা লুৎফা।

  •  
  •  
  •  
  •