ঢাকা শহরে বাড়ির ছাদে আখ, আম, পেঁপে চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইট-পাথরের এ শহরে অফিস শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্তি মেটাতে ছয়তলার ক্ষেত থেকে আখ কেটে চিবোচ্ছেন আ ন ম জোবায়ের, আর তৃপ্ত মনে ভাবছেন বাগানের আমগুলো আরেকটু বড় হলেই গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া যাবে। গল্প নয়, এটা এখন বাস্তবতা।

মিরপুরের রূপনগর এলাকার শেয়ালবাড়িতে থাকেন প্রকৌশলী জোবায়ের। এখানে আড়াই কাঠা জমির ওপর তার ছ’তলা বাড়ির ছাদটি সবুজে সবুজময়। নিচের মাটি থেকে শুরু করে সে সবুজ গিয়ে মিশেছে ছয়তলার ছাদে। কোনো বাণিজ্যিক ভাবনা নয়, শুধুই শখের বসে বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন তিনি। যেখান থেকে সারাবছরের ফলের চাহিদার পাশাপাশি পরিবারের প্রাথমিক চিকিৎসার পথ্যও মিলছে। কারণ ফলের পাশাপাশি তার বাগানে রয়েছে নানান রকম ওষুধি গাছ।

ইদানিং ঢাকা শহরে বাসার ছাদে গাছ লাগানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই শাক-সবজি, ফুল-ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি গাছের বাগান গড়ে তুলছেন বাসার ছাদে। কিন্তু পরিবর্তন ডটকম এর অনুসন্ধানে প্রথম চোখে পড়ে ঢাকা শহরে কেউ বাড়ির ছাদে আখের চাষ করছেন। প্রকৌশলী জোবায়ের পরিবর্তনকে শুনালেন তার বাগান কাহিনী ও আখের চাষ সম্পর্কে।

আলাপচারিতায় তিনি বললেন, পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম গোপালগঞ্জ। আসার পথে আখ কিনে চিবোচ্ছি সবাই। বাচ্চারা বললো বেশ মিষ্টি খেতে আখগুলো। সঙ্গে সঙ্গে ভাবনা এলো এসব আখতো ঢাকা শহরে দ্বিগুণ টাকাতেও মিলবে না।

aam3

তাই নিয়ে নিলাম মাটিতে রোপনের অংশটুকু। ছাদের বাগানে লাগিয়ে দেখি তরতর করে বেড় উঠছে আখ। এখন নিয়মিত নিজ ক্ষেতের আখ খাচ্ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো বড় হলে এ আখ পাশের বাড়ির ছাদ পর্যন্ত চলে যায়।

বাগানের সাথে পরিচয় করাতে গিয়ে জোবায়ের বললেন, এ বাগানে রয়েছে রাজশাহীর আম ও দিনাজপুরের লিচু গাছসহ প্রায় শতাধিক বিভিন্ন ধরনের গাছ। বছরজুড়ে আম ধরলেও লিচুর ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সৌদি আরবের এই খেজুর গাছ, আরেকটু বড় হলেই কিন্তু ফল দেবে। এছাড়া জামরুল, কামরাঙ্গা, আমরা, করমচা লেবু ও টমেটোর ফলন খুব ভালো হয় এ বাগানে। থাইল্যান্ড থেকে আনা রামবুটান গাছটি এখানকার আবহাওয়ায় টিকতে না পারলেও সতেজ এই অর্কিডে ফুল ফোটে জুন-জুলাই মাসে। আসলে আমি যখন যেখানে যাই পছন্দের গাছ সংগ্রহ করি। বন্ধুরা বিষয়টি জানে বলে তারাও আমাকে বৃক্ষ উপহার দেয়। এভাবেই এ বাগানে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রায় শতাধিক গাছ।

ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে বিষণ্ন কুরি, বাশক পাতা, তুলসী, ডায়াবেটিক গাছ, চিরতা, গন্ধ ভাদাল, এ্যালোভেরা, নিম প্রভৃতি যা এই পরিবারের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাই। সবজির গাছ ছাড়া বাগানে যেসব ফুল আর পাতাবাহার গাছ সবই আমার স্ত্রী লাগিয়েছেন। কারণ আউটপুট ছাড়া আমি কোন গাছ লাগাই না আর ওনার পছন্দ সৌন্দর্য বর্ধন গাছ। ওসমান গণি নামের এক তরুণকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাগানটি সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য। কিন্তু বাগানের যত্নের দিকটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন আমার শ্বশুর এস এম আনোয়ারুজ্জামান। তিনি হার্টের রোগী ও বয়স হওয়া সত্ত্বেও বৃক্ষসেবা করেই অনেক সুস্থ সতেজ জীবনযাপন করছেন বলে আমরা মনে করি। অবসর জীবনে আমারও সময় কাটবে এ বাগানকে ঘিরেই।

জোবায়ের জানালেন, অনেকেই মনে করেন ছাদে বাগান করলে বাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ধারণাটি যে ভুল তার প্রমাণ আমার এ বাগান। কারণ বাগানের ভাবনা থেকেই বাড়ি করার সময় আমি ছয়তলার ছাদটি স্বাভাবিকের থেকে এক ইঞ্চি বেশি অর্থাৎ ছয় ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে করেছি। প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।

এছাড়া গাছ লাগানোর পাত্র হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে, সংসারের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বালতি, মগ, তেলের পট ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে আর সার তৈরি হচ্ছে বাড়ির আবর্জনা থেকে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি খরচের প্রয়োজন হচ্ছে না।

ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রকৌশলী জোবায়ের বলেন, ওপর থেকে ঢাকা শহরকে ইট পাথরের নগরী মনে হয়। অথচ বাড়ির ছাদে বাগান করার সামান্য ইচ্ছাই পারে ধুসর এ ঢাকাকে সবুজ নগরীতে পরিণত করতে। এতে আমাদের নতুন প্রজন্ম পাবে বিশুদ্ধ শ্বাস আর সুন্দর আগামী।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: