সিলেটের জৈন্তাপুরে বিষমুক্ত ‘করলা’ চাষে সাফল্য (ভিডিও)
সিলেট সংবাদদাতা:
জৈন্তাপুরে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘করলা’তারা প্রায় দেড়শ’ পরিবার। চাষ করেছেন ‘করলা’। তাদের চাষ করা ‘করলা’র বিস্তীর্ণ মাঠ সবুজে আচ্ছাদিত। ‘করলা’র ওই মাঠে অপলক চোখে তাকালেই যেনো সবুজে ঘেরা অরণ্য! সবুজের সমারোহ। ‘করলা’র সবুজ ছায়ায় ঘিরে রেখেছে বিশাল সবজি জমি। সিলেটের জৈন্তাপুরের প্রায় দেড়শ’ পরিবারে ‘করলা’ চাষে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। আর তাদের ঘিরেই এমন সাফল্যের গল্প!
নিজেদের অভিজ্ঞতায় ‘করলা’ চাষ করে এখন তারা সাবলম্বি। স্বপ্ন বুনেন তারা আরো বেশি সাবলম্বি হওয়ার। তাই এ চাষের প্রতিও কৃষকদের চাহিদা বেড়েছে; আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। ‘করলা’ চাষ জৈন্তাপুরে এক নতুন সম্ভাবনা। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রও এমনটা জানিয়েছে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের রুপচেং মাঝরবিল এলাকায় প্রায় ৮শত বিঘা জমিতে প্রায় দেড়শ’ পরিবার শিম, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ ও ‘করলা’ চাষ করে আসছেন। ওই সব সবজির মধ্যে এ বছর কৃষকের নজর কেড়েছে ‘করলা’ চাষ। অনেকেই এ চাষ করে সাবলম্বি হয়েছেন। তাই ‘করলা’ চাষীর সংখ্যাই এ বছর তুলনামূলকভাবে বেশি। ঝুঁকছেন তারা ‘করলা’ চাষে। অনেকে এ সবজির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জৈন্তাপুরে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘করলা’রুপচেং মাঝরবিল গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কয়েকটি পরিবার ‘করলা’ চাষ করে ভাল ফলন পায়। চলতি বছরে কৃষক আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, মজর আলী, মো. কাওছার আহমদ, মারুফ আহমদ, জমির উদ্দিনসহ প্রায় দেড়শ’ পরিবার প্রায় ৮ শত বিঘা জমিতে ‘করলা’ চাষ করেন। বিঘা প্রতি সার কীটনাশক, বীজ এবং মাচা তৈরিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে তারা প্রথম কাটায় ১০-১২ হাজার টাকা মূল্যের ‘করলা’ বিক্রি করেছেন। বেশ কয়েকবার ফলনও তোলা যায়। কেউ কেউ দ্বিতীয়বারও ‘করলা’ কেটেছেন। তাদের আশা সুষ্ঠুভাবে ফলন তুলতে পারলে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে লাখ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত করলা ফলনে আয় হবে।
জৈন্তাপুরে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘করলা’করলা চাষী মজর আলী জানান, তিনি গত বছর দেড় বিঘা জমিতে করলা চাষ করেন। ওই জমি থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করে লাখ টাকার করলা বিক্রি করেছেন। তাই এ বছর তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ‘করলা’ চাষ করেছেন। এসব পরিচর্যায় সার বীজ কীটনাশক এবং মাচা তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিনি দ্বিতীয় দফায় ৫০হাজার টাকা করলা বিক্রি করেছেন। জমিতে যেভাবে ফলন হয়েছে তাতে এখন কয়েক দফা ‘করলা’ বিক্রি করতে পারবেন।
এছাড়া আবদুস সুবহান, আলিম উদ্দিন, আবদুর রহমান, সইফুল্লাহ, আবদুল মাজেদ, শাসুসুদ্দিন, মনির কামরুল হাসান, আজিজুল শামিমসহ অনেকেই ‘করলা’ চাষে তাদের সাফল্যের কথা জানিয়েছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক জানান, কৃষকরা তাদের নিজ উদ্যোগে ‘করলা’ চাষ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। মাঝে মধ্যে রোগ বালাই সম্পর্কে আমাদের ফিল্ডকর্মীদের সহযোগিতা নিয়েছেন তারা। ফিল্ড কর্মীরাও সহযোগীতা করেছেন। এছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে চাষীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা করা হয়, যাতে করে কম খরচে বেশী উৎপাদন করা যায়। তিনি আরো বলেন, ‘করলা’র পুষ্টিগত গুণও ভাল। ডায়াবেটিস রোগির জন্যও ‘করলা’ উপকারী। এ চাষে অনেক কৃষকই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।