২ মণ ধানে একজন শ্রমিক

নিউজ ডেস্ক:

এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে কিশোরগঞ্জের অধ্যুষিত হাওরাঞ্চলে। কিন্তু বাম্পার এই ফলনের পরও স্বস্তিতে নেই হাওরের কৃষক। একদিকে গত কয়েক দিন ধরে মুশলধারে বৃষ্টিতে আগাম বন্যার আতঙ্ক রয়েছে। অবিরাম বর্ষণে জমিতে পানি জমে থাকায় ২ মণ ধানের দামে মিলছে একজন শ্রমিক।

ফলে কৃষক তার জমির পাকা ধান কাটতে পারছেন না। কোনো কোনো এলাকার কৃষক জমির ধান কাটতে পারলেও বেহাল যোগাযোগের কারণে কাটা ধান বাড়িতে নিতে পারছেন না। ফলে কৃষকের চোখের সামনে জমির পাকা ধান জমিতেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে সোনার ফসল।

কৃষকেরা জানান, একদিকে ধান কাটার কৃষি শ্রমিকের সংকটের কারণে পাকা ধান কাটা যাচ্ছে না, আর অন্যদিকে কর্দমাক্ত কাচা রাস্তার কারণে হাওর থেকে কাটা ধান জমি থেকে বাড়িতে নেওয়া যাচ্ছে না। দুই দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যার আতঙ্কে রয়েছে হাওরের কৃষক। ফলে জমির ধান তোলা নিয়ে কৃষক এখন দিশেহারা।

হাওরাঞ্চল ঘুরে জানা যায়, জেলার ৮টি হাওরাঞ্চলের উপজেলর মধ্যে ইটনা, অষ্ট্রগ্রাম ও মিঠামইন এ তিনটি উপজেলার চার-পাঁচটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সবক’টি ইউনিয়নের ধান হাওর থেকে ট্রলি কিংবা গাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর মত কোনো ব্যবস্থা নেই। নতুন ফসলরক্ষা বাঁধে যেসব কাঁচা রাস্তা রয়েছে, সেসবও বৃষ্টির কারণে ধসে গিয়ে কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই রাস্তা দিয়ে কোনো পরিবহন চলাচল করতে পারে না। এছাড়া অন্যান্য বছর বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা ধান কাটার জন্য আসতো। বিগত বছরসমূহে পর পর অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আগের মতো আর ধান কাটা শ্রমিকেরাও আসছে না। এই সুযোগে স্থানীয় ধান কাটা শ্রমিকেরা চড়া পারিশ্রমিক ছাড়া ধান কাটছে না। যেখানে এক একর জমি কাটার জন্য চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগত, সেখানে এখন বার থেকে চৌদ্দ হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক মিলছে না।

মিঠামইন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর বাজুকা গ্রামের কৃষক মো. রবিন মিয়া জানান, বালিচাপড়া হাওরে তিনি ৮ একর জমি করেছিলেন। মাত্র এক একর জমি তিনি কেটেছেন। বাকি জমির ধান পাকলেও শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছেন না। অবিরাম বর্ষণে জমিতে পানি জমে থাকায় ২ মণ ধানের দামে মিলছে একজন শ্রমিক।
ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের কৃষক অমর আলী জানান, ইটনা হাওরে তিনি ১২ একর জমি করেছেন। জমির ধানও পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়া কোনো রকমে পাঁচ একর জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি জমি যে কিভাবে কাটবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই!

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হাওরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে ধান কাটা শ্রমিকের চাহিদাও বেড়ে গেছে। দুই মন ধানের দামেও একজন শ্রমিক মিলছে না। একর প্রতি চার-পাঁচ হাজার টাকার বিপরীতে অনেককে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়ও শ্রমিক সংগ্রহ করে ফসল কাটতে দেখা যাচ্ছে। তারপরও শ্রমিক মিলছে না। অনেক কৃষক শ্রমিক না পেয়ে হাওরের পাড়ে বসে নিজের জমির দিকে তাকিয়ে বিলাপ করতেও দেখা গেছে। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে কাবু এখন হাওরের কৃষক। জমিতে ফলানো সোনার ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত তাদের স্বস্তি নেই।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসরাম জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর কৃষকের জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর অনেক ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু শ্রমিকের মূল্য বেশী ও রাস্তা ঘাটের অবস্থা খারাপ থাকায় হাওরের কৃষক ঠিকমতো জমির ধান কেটে তুলতে পারছে না। এর জন্য বৈরী আবহাওয়া ও আগাম বন্যার ফসলরক্ষার কাচা বাঁধ ধসে কার্দমাক্ত হওয়ায় ধান তুলতে পারছে না হাওরের কৃষক।

  •  
  •  
  •  
  •