ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছে সাভারের ফুল চাষিদের

সাভার প্রতিনিধি:

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের বিরুলিয়ার ফুল চাষিরা। বিশেষ এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আগেভাগেই বাগানের পরিচর্যা শুরু করেছেন তারা।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, এই মাসে ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়।

সাভারের বিরুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয় টুকটুকে লাল গোলাপ। এখানে ৩৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় হাজার চাষি ফুল চাষ করছেন। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করছেন ফুল চাষিরা। এছাড়া জিপসি, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ বেশ কিছু ফুল চাষ করছেন তারা। আর দেড় হাজার ফুল চাষি ফুল শ্রমিকদের নিয়ে বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঙ্ক্ষিত বাজারের আশায়।

কাঙ্ক্ষিত বাজারের আশায় ব্যস্ত গোলাপ চাষিরা
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিরুলিয়ার বাগ্নীবাড়ী, মইস্তাপাড়া, কাকাব, সামাইর, সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, আকরান গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ফুলবাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত ফুল চাষিরা। দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। টুকটুকে লাল গোলাপের নিচে বসে আগাছা পরিষ্কার করছে ফুল চাষিসহ শ্রমিকরা। জারবেরা শ্রমিক ও চাষিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। এ মাসে বাড়তি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রয়োজনমতো গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার, জমিতে সেচ প্রদানসহ ফুলের পরিচর্যা করছেন চাষি ও শ্রমিকরা।

মাঠ জুড়ে জারবেরা ফুলের সমাহার
গোলাপ বাগানের শ্রমিক আলী হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৩০০ টাকার বিনিময়ে গোলাপ বাগানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করি। এই কাজ বছর জুড়ে প্রায় প্রতিদিন করে থাকি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে কাজের একটু চাপ বেশি। সারা বছরে ৬ থেকে ৭টি দিবসে আমাদের ফুল চাষিরা অতিরিক্ত ফুল বিক্রি করতে পারে। আমরাও তাদের পাশে থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করে থাকি। এই গোলাপ বাগানই আমাদের জীবিকার প্রধান ক্ষেত্র। তাই ফুল চাষিদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।

আরেক শ্রমিক আরজিনা বলেন, আমাদের একদিন কাজ না করলে সংসার চলে না। কোন কোন দিন কাজ পাওয়া যেতো না। তখন খুব কষ্ট পেতাম। এখন ফুল চাষি বেশি তাই কাজের স্থানও বেশি হয়েছে। তাছাড়া এখন ফুল বিক্রির মৌসুম তাই ভরপুর কাজ। প্রতিদিনই কাজ পাচ্ছি সংসারও মোটামুটি ভাল চলছে।

ফুলের পরিচর্যা করছেন চাষিরা
গোলাপফুল ব্যবসায়ী ও চাষি মো. মনির হোসেন বলেন, আমি প্রায় ৯ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। এরমধ্যে গোলাপই বেশি। এছাড়া রজনীগন্ধাও চাষ করেছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি অনেক ফুল বিক্রি করতে পারবো। ফুলের বাজার আরেকটু বাড়তে পারে, বাড়লেই লক্ষ্য অনুযায়ী ফুল বিক্রি করতে পারবো। এবার একটু লাভও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, কারণ আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো।

গোলাপের পাশাপাশি জারবেরাও চাষ করছে চাষিরা
জারবেরা চাষি রাজীব বলেন, আমরা আগে ধান-সবজি চাষ করতাম কিন্তু যখন থেকে ফুল চাষ করা শুরু করেছি আমরা আগের চেয়ে লাভবান। এই এলাকার প্রায় চাষিরা গোলাপ চাষ করে থাকে তবে আমি গোলাপের পাশাপাশি জারবেরা চাষ করছি। আমরা প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি বিশেষ দিনগুলোর যেমন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এই বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা ফুলের দাম দ্বিগুনের চেয়েও বেশি পেয়ে থাকি। তাছাড়া এবার তীব্র শীত থাকার কারণে ফুলের উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি যার ফলে সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে খুব ভালো পরিমাণ ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ফুল চাষিরা প্রতিটি দিবস উপলক্ষে বাগানের বাড়তি পরিচর্যা করে থাকে। আমরা পাশে থেকে তাদের সবধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যাতে চাষিরা বাজারে পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ করার পাশাপাশি লাভবান হতে পারে।

  •  
  •  
  •  
  •  

Tags: