আমলাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার সভাঃ শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও আশংকা

নিউজ ডেস্ক

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। উক্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম’র ব্যানারে এক বিবৃতি দিয়েছেন ১০০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। শুক্রবার (২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানানো হয়।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, “আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি যে, আগামী ০৪/০৮/২০১৯ তারিখ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা সম্পর্কিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোন প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিৎ ছিল কিছু বরেণ্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে, যারা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হবেন, প্রথমে একটি সাব-কমিটি করে একটি বৃহত্তর আঙ্গিকে সুপারিশ নেওয়া যেত। সেই কমিটির সুপারিশমালা নিয়ে পুনরায় শিক্ষক এবং একমাত্র শিক্ষকদের প্রতিনিধি নিয়েই মন্ত্রী মহোদয়কে সমন্বয়কের ভূমিকায় রেখে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে, যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয় হতে পারে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই সভায় মূলত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা এবং তাদের পাশাপাশি ইউজিসি’র চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।ইউজিসি’র চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান নিজ নিজ পদে অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করেন না।”

শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সভার সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তারা বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ভূমিকা সরকারী কর্মকর্তাদের মতই। অথচ, এ জাতীয় একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুগপোযোগী, কার্যকরী এবং টেকসই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশেষ জ্ঞান একান্তভাবে অপরিহার্য যা সঙ্গতকারণে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের থাকার কথা নয়। তারা নিজ নিজ বিষয়ে জ্ঞানী এবং কর্মদক্ষ। কিন্তু পঠন-পাঠনও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার সাথে জড়িত, অত্যন্ত উঁচুমানের বিষয় জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আধুনিক ও মৌলিক ধ্যানধারণা এবং গবেষণায় উচ্চপর্যায়ে সাফল্য ও অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাঁদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া এই ধরণের অতিগুরুত্বপুর্ণ একটি সভা কতটুকু সফল হতে পারে সে বিষয়ে আমরা গভীর ভাবে সন্দিহান।”

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত নন এমন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি রাখার বিষয়টি দৃষ্টিকটু বলে উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলেন, “একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। সরকারী কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট রাখা হয় না এবং রাখা সমীচীনও নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নীতিমালা নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত নন এমন কর্মকর্তাদের শুধু রাখাই হয়নি উপরন্তু তাদের সংখ্যাই বেশি। আমাদের বিবেচনায় বিষয়টি দৃষ্টিকটুও বটে। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে উক্ত সভায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সম্প্রদায়ের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব না থাকাটা অত্যন্ত রহস্যজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ও প্রক্রিয়াগত ভুল বলে আমরা মনে করি, যা শিক্ষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অনাস্থার তৈরি করেছে।”

তারা আরও বলেন, “শিক্ষকরা রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ যারা শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অতুলনীয় অবদান রেখে চলছেন। আমরা আশা করব যে, দেশে শিক্ষা ও গবেষণার স্বার্থে এবং পাশাপাশি শিক্ষকদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিরসন কল্পে উল্লিখিত সভার আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ নিয়ে সেই সুপারিশসহ মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে কেবল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমিতি ও ফেডারেশনের প্রতিনিধি ও ইউজিসির চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের একটি সাব-কমিটি গঠনের তাগিদও দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার মধ্যদিয়ে একটি যথোপযুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণীত হবে বলে আমরা মনে করি, যা দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আন্তর্জাতিক মান অর্জনে বিশেষভাবে অবদান রাখবে।”

  •  
  •  
  •  
  •