বাকৃবিতে রাত পোহালেই সপ্তম সমাবর্তন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
প্রকৃতিকন্যা খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সপ্তম সমাবর্তন আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাত পোহালেই সমাবর্তনের স্বাদ পেতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষি শিক্ষার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জনাব মো: আব্দুল হামিদ। রেজিস্ট্রেশনের প্রায় এক বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সমাবর্তন। সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। ইতিমধ্যে সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ সমাবর্তনে এক হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থীকে স্নাতক এবং দুই হাজার ৮৫১ শিক্ষার্থীকে স্নাতকোত্তর এবং ৩৮ শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রির সনদ দেওয় হবে। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
সমাবর্তনের সময়সূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সমাবর্তনস্থলে শোভাযাত্রাসহ উপস্থিত হবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ। এরপর সকাল ১১টা ৭ মিনিটে সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপরই স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলী আকবর। পরে ১১টা ২৩ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেবেন। দুপুর ১২টার দিকে আচার্যের ভাষণের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছেন এসএসএফের সদস্য ও গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া সমাবর্তন স্থলের আশপাশে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে করা হয়েছে। সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিজয় একাত্তর’ চত্বর, প্রশাসনিক ভবন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে আলোর ফোয়ারা।
এদিকে গতকাল রবিবার থেকেই সমাবর্তনের গাউন ও টুপি গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড বিজনেস স্টাজিজ ভবনে ১০টি বুথ বসানো হয়েছে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা আজও এসব বুথ থেকে গাউন ও টুপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
সমাবর্তনের প্রস্তুতি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সমবার্তন কমিটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি শেষ। সমাবর্তন মিছিলের মহড়াসহ অন্য বিষয়গুলোর প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির দপ্তরের কাছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৪ বছরে বাকৃবিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বপ্রথম ১৯৬৮ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন আচার্য আব্দুল মোমেন খানের সভাপতিত্বে বাকৃবিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয়, ১৯৯৪ সালের ৫ জুন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তৃতীয়, ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে চতুর্থ, ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে পঞ্চম এবং ২০১১ সালের ৮ মার্চ মো. জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এ জন্য ওই বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন করা হয়েছিল। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে সময় দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্থগিত করা হয় সমার্বতন।
ছবি: সংগৃহিত
You must be logged in to post a comment.