স্নাতক পর্যায়ে কেন গবেষণায় নিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন?

হালিমা তুজ্জ সাদিয়া,  এস এম আবু সামা আল ফারুকী: 

গবেষণা, জ্ঞান অনুসন্ধানের অন্তর্ভুক্ত। গবেষণাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট তথ্য লাভের বৈজ্ঞানিক এবং পদ্ধতিগত অনুসন্ধানও বলা হয়। গবেষণা হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি শিল্প।

Redman এবং Mory গবেষণাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ‘‘নতুন জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতিমূলক চেষ্টা”।

গবেষণা- অজানা থেকে জানার দিকে ধাবিত করার একটি গতি। গবেষণার দ্বারা সমস্যার সংজ্ঞায়ন ও পুন:সংজ্ঞায়ন, পূর্বানুমান তৈরি অথবা সম্ভাব্য সমাধানগুলো সংগ্রহ করা, সংগঠন করা ও প্রাপ্ত তথ্যের মূল্যায়ন করা; অবরোহ তৈরি করা ও ফলাফলে পৌঁছানো এবং পরিশেষে ফলাফল সাবধানে পরীক্ষা করার মাধ্যমে সংগঠিত পূর্বানুমানের সাথে খাপ খায় কিনা তা নির্ধারণ করা।

গবেষণা আসলে উচ্চশিক্ষার একটি অংশ। স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার দিকে তেমন মনোযোগী নয়। তবে গবেষণা নিয়ে চিন্তা ভাবনা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ গবেষণার মনন বিকাশের দারুণ সময়। হুট করে রাতারাতি গবেষক হয়ে ওঠা যায় না, তাই এই সময়কে গোছানোর জন্য আগের থেকে প্রস্তত থাকা প্রয়োজন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেকে তাড়াহুড়া করে গবেষণা শুরু করেন। তখন একটু বেশি চাপ হয়ে যায়। গবেষণা যত আগে শুরু করা যায়, যত আগে গবেষণার কৌশল সম্পর্কে শেখা যায়, আর্টিকেল লেখার চর্চা করা যায়, ততই নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।

স্নাতক পর্যায়ে গবেষণায় যেসব সুবিধা রয়েছে

১. স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরারা পড়াশোনার বিষয়বস্তুকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা শিখতে পারবে। এতে করে পড়ার বিষয়টি আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।

২. গবেষণার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে গিয়ে যোগাযোগ বাড়বে।

৩. পেশাদার পরিবেশে কাজ করার ক্ষমতা বাড়বে।

৪. প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা শিখতে পারবে।

৫. স্নাতক পর্যায়ে গবেষণায় সুযোগ প্রদান করলে মেধা বিকশিত হবে।

৬. গবেষণা সম্পর্কে ধারণা আসবে, অন্যদের অংশগ্রহণ করাও বাড়াতে পারে।

৭. প্রাক্তন ছাত্ররা তাদের সাথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে।

৮. স্নাতক গবেষণায় নিযুক্ত শিক্ষার্থীরা তাদের চিন্তাচেতনাকে প্রসারিত করতে পারবে।

৯ . স্নাতক পর্যায়ে যারা গবেষণা করবে, গবেষণাপত্র প্রকাশ করবে, তাঁদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি থাকে। এক্ষেত্রে বিদেশে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।

১০. দেশে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্সি, বৃত্তির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

১১. গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপে সততা ও নৈতিকতার বিকাশ ঘটে, মানসিকভাবে সৎ ও নৈতিক হওয়া প্রত্যেক গবেষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণার দুনিয়া অনেক বড় এবং উন্মুক্ত। তাই গবেষণাকে বিস্তৃত করতে হবে। গবেষণার দ্বারা তাত্ত্বিক পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দেওয়া যায়। গবেষণার জন্য প্রয়োজন আগ্রহ এবং ধৈর্যশক্তি। আগ্রহ আর ধৈর্যশক্তির জোরে যেকোনো শিক্ষার্থীই ভালো গবেষক হয়ে উঠতে পারে। বুদ্ধিমত্তা ও কৌতূহল গবেষক হওয়ার জন্য ভীষণ জরুরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ, নেতৃত্বদান, অন্য গবেষকের অধীনে কিংবা দলের সঙ্গে কাজ করার কৌশল আয়ত্ত করতে সহায়তা করে। গবেষণা শিক্ষার্থীদেরকে অনুসন্ধিৎসু করতে শেখায়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা করতে শেখায়। তাই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে স্নাতক পর্যায়েই গবেষণায় মনোনিবেশ করা উচিত।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: , ,