খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে মাছ ও মুরগির ভেল্যু চেইন তরান্বিতকরণ প্রকল্পের প্রদর্শনী ও প্রচার অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ফিড দ্যা ফিউচার ফুড সেফটি ইনোভেশন ল্যাব এর অর্থায়নে পরিচালিত “বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে মাছ ও মুরগির ভেল্যু চেইন তরান্বিতকরণ”প্রকল্পের প্রদর্শনী ও প্রচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:০০ টায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রুপালী হ্যাচারীতে এই প্রদর্শনী ও প্রচার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান। প্রকল্পটির বাংলাদেশ অংশের পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ আবুল মনসুর এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোঃ আনিসুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের, ডেপুটি ডিরেক্টর, মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ ময়মনসিংহ জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা যে খাবার খাই, তা কি নিরাপদ কিনা তা আমাদের জানতে হবে।এসব প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত মাছ আমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আমরা যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষ করতে পারি তাহলে আমরা দেশের মাছের চাহিদা পূরন করে বিদেশে রপ্তনি করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, খাদ্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে পোনা অবমুক্তকরণ, সময়ে সময়ে মাছের বৃদ্ধি ও ওজন নিরক্ষণ, নিয়মিত পুকুর পরিদর্শন, মাছ আহরণ ও বিক্রয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে সমস্ত কার্যাবলী ইতোমধ্যে সম্পাদন করেছি। তিনি বলেন, ভোক্তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের চেয়ে এই প্রকল্পের আওতায় অধিকতর নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষকৃত তেলাপিয়া ৩০ শতাংশ ও পাঙ্গাস মাছ ২৫ শতাংশ অধিক দামে ক্রয় করেন, যা ক্রেতাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিরাপদ খাদ্যের প্রতি আগ্রহের একটি বহিঃপ্রকাশ বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে প্রকল্পের নিজস্ব খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত মাছ ও প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষকৃত মাছে প্রয়োজনীয় ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি কেমন ছিল তার একটি চিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক, বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের প্রফেসর ড. কে. এইচ. এম. নাজমুল হোসেন।
জানা যায়, নিরাপদ খাদ্য, বিশেষ করে নিরাপদ মাছ ও মুরগি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট গবেষকবৃন্দ অধিকতর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ময়মনসিংহের ফুলপুরে দুটি পুকুরে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস এবং মুক্তাগাছার একটি পুকুরে রুই মাষ চাষ করেছেন। স্থানীয় খাদ্য প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মৎস্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য প্রস্তুত করা হয়েছে যেখানে কোন এন্টিবায়োটিক, হরমোন, বৃদ্ধি প্রবর্ধক কিংবা কোন ফিড এডিটিভস ব্যবহার করা হয়নি।
প্রকল্পের বিভিন্ন কর্মকান্ড যা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তা প্রদর্শনী ও প্রচারের উদ্দেশ্যে এ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়, যেখানে নীতি নির্ধারণী কার্যে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন এমন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে কৃষক পর্যায়ে অধিকতর নিরাপদ মাছ চাষে উৎসাহ প্রদানের স্বার্থে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ২০ এর অধিক মৎস্য উদ্যোক্তা ও চাষীকে।
মাছ উৎপাদন, বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে তাদের মনোভাব ও অনুশীলন কেমন, এ সংক্রান্ত একটি বিবরণী উপস্থাপন করেন প্রকল্পের আরেক উপ-প্রকল্প পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সামিনা লুৎফা।
উল্লেখ্য, সাড়ে তিন বৎসর মেয়াদী এই প্রকল্পটি ২০২১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের যুক্তরাষ্ট্র অংশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটির এগ্রিকালচারাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মদন মোহন দে।
You must be logged in to post a comment.