বাকৃবিতে সড়ক দুর্ঘটনা, চিকিৎসা না পেয়ে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ

বাকৃবি প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত বিচরণ এবং বেপরোয়া যানবাহন চলাচলে প্রায়ই দূর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর,  (রবিবার) আনুমানিক সন্ধ্যা ৬:৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় খামার এলাকায় হাজিবাড়ি রোড সংলগ্ন মূল রাস্তায় এক অটোরিকশার সাথে মোটরসাইকেল আরোহীর ধাক্কায় দূর্ঘটনা ঘটে। এতে অটোরিকশা চালক গুরুতর আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় সেখানে অবস্থানরত একটি স্পীডব্রেকারের জন্য এই দূর্ঘটনাটি ঘটে। স্পীডব্রেকারটির এক পার্শ্বে অবস্থিত ফাঁকা জায়গা দিয়ে দু’দিকের যানবাহন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করায় এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।

জানা যায়, দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত রিকশাচালককে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে ফেলে রাখেন। এমনকি ড্রেসিং করাতেও অপারগতা জানানো হয়। লোকটির মাথার পিছন দিয়ে অনবরত রক্তক্ষরণ দেখে সেখানে  অবস্থানরত কয়কজন শিক্ষার্থী চিকিৎসককে অনুরোধ করলেও তিনি বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (এমএমসিএইচ) পাঠানোর অনুরোধে করলেও তা করেননি। পরে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এমএমসিএইচ এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

হাসপাতালে পৌছানোর কিছুক্ষন পর বৃদ্ধ রিকশা চালকের মৃত্যু হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা সেবার মান ও শিক্ষার্থীদের সাথে সেখানকার চিকিৎসকদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বাকৃবির বেহাল  নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়গুলো নতুন করে সামনে আসে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ হেলথ কেয়ার সেন্টারের সেবার মান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অধিকাংশ সময়েই ডাক্তারের অনুপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের সাথে নানা রকম দুর্ব্যবহার, পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন ওষুধ এর ঘাটতি, যথাযথ ট্রিটমেন্ট না করে মেডিকেলে রেফার করা এবং অ্যাম্বুলেন্স সময়মত না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়।

কল ডিউটি ডাক্তার সার্বক্ষণিক থাকার কথা থাকলেও ফোন করে পাওয়া যায় না। যারা চিকিৎসা নেন তাদের অধিকাংশই বহিরাগত বলে জানা গেছে। এসব রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করতে ব্যস্ত এখানকার টেকনিশিয়ান ও ডাক্তার।

বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টারর এসব কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় খবর ছাপাসহ প্রতিবাদ হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানান কয়কজন ভুক্তভোগী।

ক্ষেত্রবিশেষে সামান্য সেবা, দু’চারটি সাধারণ ঔষধ  এর জন্য এরকম একটি প্রতিষ্ঠানে এত পরিমান অর্থ ব্যায়ের প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে না নেওয়া, জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা এবং প্রয়োজনীয় মনিটরিং না থাকাকে দায়ী মনে করছেন অনেকেই।

বাকৃবি নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

বিভিন্ন পয়েন্টে চেকিং না থাকা, আমবাগানসহ খামার এলাকায়  জঙ্গল,অধিকাংশ জায়গায় রোডলাইট না থাকায় দিনে ও রাতে নানা অপকর্ম  হতে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি, তৎপরতার ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে দিন দিন বাড়ছে এসব ঘটনা।

নিরাপত্তা কর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হলে তাদের পাশে থেকে কর্তৃপক্ষের জোড়ালো ভুমিকা না থাকায় তারা দায়িত্ব পালনে নিজেদেরকে অসহায় ও ঝুকিপূর্ণ মনে করেন।
প্রশাসনের শক্ত অবস্থান, কর্তৃপক্ষের যথাযথ মনিটরিং, প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রক্টরিয়াল বডির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করাতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন।

দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা নিরসনে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে সমাধানের প্রত্যাশা সকলের।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3