বালাইনাশকের প্রভাবে হুমকিতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য: বাকৃবি গবেষক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশের কৃষি এখন এক গভীর ও জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদনের চাপ, অন্যদিকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর ব্যবহৃত হয় হাজার হাজার টন কীটনাশক, যার অনেকগুলোই অতি বিষাক্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। এসব কীটনাশক খোলা বাজারে সহজে পাওয়া যায়, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অনেক কৃষক নিয়ম না জেনে বা উপযুক্ত পরিমাপ না মেনে কীটনাশক ব্যবহার করেন। কখনও একাধিক কীটনাশক মিশিয়ে ব্যবহার করার ফলে খাদ্যশস্যে থেকে যায় মারাত্মক মাত্রার রাসায়নিক। এসব বিষাক্ত উপাদান খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে মানুষের শরীরে জমে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, হরমোনের সমস্যা ও প্রজনন জটিলতা সৃষ্টি করে।

এছাড়া মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা কমে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ পানির মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বিষক্রিয়ায় মাছ, মৌমাছি, গবাদিপশু ও অন্যান্য উপকারী প্রাণীও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এর ফলে দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতেও নেমে এসেছে বড় ধরনের হুমকি।

যদিও কীটনাশক ব্যবহারে কিছু আইন ও নির্দেশনা রয়েছে, বাস্তবে এসবের কার্যকর প্রয়োগ অত্যন্ত দুর্বল। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সচেতনতা, দক্ষতা উন্নয়ন, বিকল্প টেকসই চাষপদ্ধতি ও সরকারি তদারকি শক্তিশালীকরণ।

গত ২৮ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক এক সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিষাক্ত কীটনাশক বন্ধ করতে হলে প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘বিষ দিয়ে মাছও ধরা হচ্ছে। গরু ছাগল ঘাস খেতে পারছে না। সেখানে আগাছা নাশক ছিটিয়ে দিয়ে ঘাস মেরে ফেলে তা বিষাক্ত করা হচ্ছে। এ বিষাক্ত পরিবেশ থেকে আমাদের বের হতে হবে। বাংলাদেশ অনেক সুন্দর দেশ, সমৃদ্ধশালী দেশ। আমরা চাইলে এ দেশকে আরো সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করা যাবে না। গণহারে বালাইনাশক ব্যবহারের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে দেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব, বিকল্প ব্যবস্থা এবং এর প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাণিবিজ্ঞানী ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, বাংলাদেশে শুধু এককভাবে কীটনাশক ব্যবহৃত হয় না। ছত্রাকনাশক, কীটনাশক ও আগাছানাশককে একত্রে বালাইনাশক বলা হয়। বালাইনাশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ছত্রাকনাশক, মোট ব্যবহারের প্রায় ৪৫ থেকে ৪৬ শতাংশ। মোট ব্যবহারের প্রায় ৩৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কীটনাশক এবং ২০ থেকে ২১ শতাংশ ব্যবহৃত হয় আগাছানাশক। এছাড়া কৃমিনাশক, ব্যাকটেরিয়ানাশক বা ইদুরনাশক ও ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন- বিষাক্ত বালাইনাশকের কারণে খাদ্যশস্যে কী পরিমাণ রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ পাওয়া যাচ্ছে?

উত্তর- বাংলাদেশে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সবজিতে। অনেক কৃষক না বুঝেই সবজি চাষে অতিরিক্ত পরিমাণে বালাইনাশক ব্যবহার করেন। সবজি সাধারণত অল্প সময়ের ব্যবধানে চাষ করা হয় এবং অল্প রান্না করে খাওয়া হয়, ফলে বালাইনাশকের প্রভাব বেশি থাকে। মোট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ সবজিতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে। সবজিভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শসায় ৫০ শতাংশ, টমেটোতে ৪০ শতাংশ, বেগুন ও ফুলকপিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আর বাঁধাকপিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়।

প্রশ্ন- বালাইনাশক পরিবেশে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং জীববৈচিত্র্যে কী ক্ষতি করে?

উত্তর- কৃষকরা যখন বালাইনাশক প্রয়োগ করেন তখন সেটি শুধু গাছে নয় মাটিতেও পৌঁছে যায় যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে ভূগর্ভস্থ পানি, পুকুর, নালা বা খালের পানি দূষিত করে। কিছু উদ্বায়ী বালাইনাশক বাতাসে মিশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় অণুজীবও বালাইনাশক শোষণ করে ফলে তা খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। এছাড়া, কিছু বালাইনাশক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। যেসব বালাইনাশকের হাফ-লাইফ বা, অর্ধ-জীবনকাল বেশি সেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে থেকে যায় ও দূষণ ছড়ায়। এসব বালাইনাশকের কারণে মাটির জন্য উপকারী কেঁচো, মাইট, পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক মারা যায়। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে বালাইনাশক জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এছাড়া পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মৌমাছিসহ উপকারী পোকামাকড়ও বালাইনাশকের জন্য মারা যেতে পারে।

প্রশ্ন- বাংলাদেশের বর্তমান বালাইনাশক ব্যবস্থাপনা নীতিমালার মূল ঘাটতি কোথায়?

উত্তর- বাংলাদেশে বালাইনাশক ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিয়মের দুর্বল বাস্তবায়ন। বাজারে অনেক নিম্নমানের ও অনিয়ন্ত্রিত বালাইনাশক সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় চোরাই পথে আনা পণ্যও বাজারে ঢুকে পড়ে যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। দ্বিতীয়ত, দেশে পর্যাপ্ত মনিটরিং বা তদারকি ব্যবস্থা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কিছু মনিটরিং হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া কৃষকদেরও সচেতন করা জরুরি যাতে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক মাত্রা (ডোজ) জানতে পারে এবং নিরাপদভাবে বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারে। এতে তাদেরকে ডিলারদের দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। আবার অনেক কৃষকের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও তারা এর সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার জানেন না বা করতে পারেন না। ফলে তারা প্রামাণিক (অথেনটিক) তথ্য থেকে বঞ্চিত হন। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে টিভি, রেডিও ও অন্যান্য গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চালানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন- বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে কোন কোন প্রযুক্তি বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কার্যকর?

উত্তর- বর্তমানে মাঠপর্যায়ে বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)। আমাদের দেশে শুধুমাত্র জৈব পদ্ধতিতে বালাই নিয়ন্ত্রণ করা সবসময় সম্ভব নয়, তাই এমন বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনাই দরকার। যদি শুরুতেই অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়, তবে তা অপচয়ই শুধু নয়, বরং ক্ষতির কারণও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জমি প্রস্তুত করার পর সঙ্গে সঙ্গে বীজ না বপন করে কিছুদিন ফেলে রাখলে অনেক ক্ষতিকর পোকামাকড় আপনাতেই মরে যায়। এসময় জৈব বালাইনাশক বা বায়ো এজেন্ট ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। উন্নত দেশে সরকার কৃষকদের এসব ব্যবস্থায় প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ‘ট্রাইকোডারমা’ নামক একটি জৈব বালাইনাশক রয়েছে যা ছত্রাকজাত রোগ দমনে অত্যন্ত কার্যকর। এর সঠিক ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার অর্ধেক পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব, যা পরিবেশ ও ফসল উভয়ের জন্যই উপকারী। এছাড়া অণুজীব বালাইনাশক ব্যবহার করে পোকামাকড় ও কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। উদ্ভিদের নির্যাস বা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও অনেক সময় পোকা দমন করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফসলের বৈচিত্র্য আনতে হবে। একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলে সেই জমি পোকামাকড়ের ‘আশ্রয়স্থল’ হয়ে যায়, এতে রোগবালাই বাড়ে।

প্রশ্ন- সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তাহলে বিকল্প প্রযুক্তি কতটা বিস্তৃত হতে পারে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে নীতিনির্ধারকদের কী ভূমিকা থাকতে হবে?

উত্তর- সরকার ভর্তুকি দিলে জৈব বালাইনাশকের সহজলভ্যতা বাড়বে। গবেষকরা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে আরও উৎসাহিত হবেন, যা ভর্তুকি দিয়ে সম্ভব। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও কৃষি সম্প্রসারণ জোরদার করলে কৃষকদের সচেতনতা বাড়বে। এতে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা পাবে। বাকৃবির গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। গবেষণায় প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবও কমানো সম্ভব।

প্রাণি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গবাদি পশু সাধারণত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বালাইনাশকের সংস্পর্শে আসে। কৃষিকাজে ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত বালাইনাশক বাতাসের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে কোনো পশু সরাসরি তা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে অথবা উন্মুক্ত মিউকাস মেমব্রেন এবং চামড়ার সংস্পর্শে আসলে তখন সেটি হবে সরাসরি সংস্পর্শ। বর্তমানে শুধু ফসল বা ফলমূল নয়, ঘাস উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ঘাস, শাকসবজি, ফলমূল বা শস্যের মধ্যে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যায় এবং ওই ফসলগুলো পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং এটি পরোক্ষ সংস্পর্শ।

প্রশ্ন- গবাদিপশুর শরীরে বালাইনাশক কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে?

উত্তর- দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশুর শরীরে বালাইনাশক প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে শরীরে জমা হয়। এর ফলে কিডনি ও লিভার ড্যামেজ (ক্ষতি) হতে পারে, মাংসপেশিতে বালাইনাশক জমা হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত বালাইনাশকের কারণে পুরুষ পশুর ক্ষেত্রে স্পার্মাটোজেনেসিস এবং নারী পশুর ক্ষেত্রে ওওজেনেসিস প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে যেকোনোভাবে, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, পশু বালাইনাশকের সংস্পর্শে আসলে উৎপাদন কমে যাবে, মাংসের গুণগত মান ও পরিমাণ হ্রাস পাবে, দুধ উৎপাদন কমে যাবে। সর্বোপরি দেশের পশুসম্পদ ধ্বংসের মুখে পড়বে।

প্রশ্ন- কীটনাশক মিশ্রিত খাদ্য বা ঘাস খাওয়ার কারণে গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণীর দুধ ও মাংসে কী ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক জমে থাকে?

উত্তর- কৃষি খাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বালাইনাশকের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন অরগানোফসফেট, অরগানোক্লোরিন, কার্বামেট, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো যেসব বালাইনাশক যেগুলোর লিপিডের প্রতি আকর্ষণ বা জমে থাকার প্রবণতা বেশি। এসব বালাইনাশক সহজে শরীর থেকে বের হয় না এবং গবাদি পশুর মাংস, দুধ ও ডিমে জমে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। দুধ ও ডিমের মাধ্যমে কিছু বালাইনাশক বের হলেও, মাংসে এগুলো বেশি জমে থাকে। এগুলো দীর্ঘদিন শরীরে থেকে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে এবং শরীরের অ্যামিনো অ্যাসিড সিকোয়েন্সে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রশ্ন- এসব রাসায়নিক গবাদিপশু হয়ে মানুষের শরীরে পৌঁছালে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে?

উত্তর- বালাইনাশক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মানবদেহের জন্য একেবারে অচেনা বা ‘ফরেন সাবস্ট্যান্স’। এসব কখনোই শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান নয় বরং এগুলো টক্সিক রাসায়নিক যা সরাসরি বা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। এসব রাসায়নিক শরীরে জমে কোষে মিউটেশন ঘটায় যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে তোলে। বলা হয়ে থাকে, অন্যান্য সাধারণ টক্সিক উপাদানের তুলনায় বালাইনাশকের মিউটেশন ক্যাপাসিটি ৫১ থেকে ৯১ গুণ বেশি যা অত্যন্ত ভয়াবহ। এছাড়া এসব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে চর্বি বা ফ্যাট টিস্যুতে জমা হয়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে, লিভার ও কিডনিকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করায় শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বোন ম্যারো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও রক্ত উৎপাদন ব্যাহত হয়, স্পার্ম ও ডিম্বাণু উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রজনন ক্ষমতা ব্যাহত হয়।

প্রশ্ন- বাংলাদেশে বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় এবং পশুস্বাস্থ্য রক্ষায় আপনার মতে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত?

উত্তর- দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ সূচনালগ্ন থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি মনে করি, গবেষণা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ এবং জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকি মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারকে গবেষণায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও গবেষণামুখী করতে হবে।

  •  
  •  
  •  
  •