কমলার জুস ব্যবহারে করোনার পজিটিভ রেজাল্ট!

রাগিব হাসান বর্ষণঃ
ছোটবেলায় স্কুল থেকে ছুটি পাওয়ার জন্য নানারকম বুদ্ধি আমরা সবাই বের করতাম, মাথা ব্যাথা থেকে পেট ব্যাথা নানারকম দুষ্টুবুদ্ধি দিয়ে স্কুলে যাওয়ার থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা আমরা সবাই করেছি, পৃথিবীর সব দেশের শিশুরাই এমন করে তবে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একটি স্কুলের শিশুরা অভিনব একটি উপায় বের করেছে স্কুল ফাঁকি দেয়ার জন্য।

ইংল্যান্ডে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে শিশুরাও আক্রান্ত হওয়ায় স্কুলগুলোতে নিয়মিত সকল শিক্ষার্থীদের কোভিড ১৯ এর র‍্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট বাধ্যতামূলক করে কর্তৃপক্ষ। এরই মাঝে ইংল্যান্ডের একটি স্কুলের শিশুরাই করোনা ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, বিষয়টি লক্ষ্য করে বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক অনুসদ্ধানে মনোযোগ দেন- কি কারনে বেশী পজিটিভ টেস্ট রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে স্কুলটিতে। তিনি অনুসন্ধান জানতে পারেন আসলে বাচ্চারা টেস্ট কিটে নিজেদের লালার স্যাম্পল না দিয়ে সেখানে কমলার জুস দেয়ার কারণে টেস্টে পজিটিভ দেখাচ্ছে।

এই ঘটনা রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে গোটা বিশ্বে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিবিসি, দি গার্ডিয়ান সহ অনেক পত্রিকার সাংবাদিকরা ওই স্কুলে যান এবং এর সত্যতা খুজে পান। পরে বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসদ্ধানে দি গার্ডিয়ান পত্রিকা মাঠে নামে। এক পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই করেন। বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। এটি জুসে থাকা কোন করোনা ভাইরাসের জন্য পজিটিভ ফলাফল নয়। জুসের অম্লতার কারনে এই ফলস (মিথ্যা/নকল) পজিটিভ রেজাল্ট। কারণ জুসের অম্লতা এই টেস্ট প্রক্রিয়াকে (লেটারাল ফ্লো টেস্ট) নষ্ট করে যার ফলে এবং পজিটিভ এর ঘরে দাগ তৈরি হয়। শুধু কমলার জুস নয় টমোটো কেচাপ ও কোকা কোলা দিয়ে একই ফলস পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়।
ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট নামে এই পদ্ধতিতে পিএইচ (অম্লতা) একটা বড় ভূমিকা রাখে। এই জন্যই মানুষের শরীর থেকে স্যাম্পল নেয়ার পর বাফার দ্রবনে স্যাম্পলটি মেশানো হয় যাতে পিএইচ এর সঠিক মান থাকে, কোমল পানীয়র কারনে সঠিক পিএইচ বজায় থাকছে না যার কারনেই মূলত “ফলস পজিটিভ” রেজাল্ট আসছে।

হাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান যোগাযোগ ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মার্ক লর্ক বলেন যে এই “নকল” দাগটি একটি বাফার দিয়ে টেস্ট করা যায় যেটি ব্যবহার করলে ডিভাইসে (টেস্ট কিট) সঠিক পিএইচ ফিরিয়ে আসবে এবং নকল দাগটি মুছে যাবে এবং নেতিবাচক ফলাফল প্রকাশ করবে।

স্কুলের শিশুদের এই অভিনব আবিষ্কার ২ সপ্তাহের ছুটির মাধ্যমে শুধু তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, তাদের পরিবার ও স্কুলকে আতংকিত করছে বলে জানান জন ডিকস নামক একজন প্রফেসর।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর আন্দ্রেয়া সেলা এই ব্যাপারে একদমই অবাক না, তিনি বলেন টেস্টের প্রটোকলকে কোন কিছু দিয়ে সক্রিয় করতে পারলেই রেজাল্ট পজিটিভ আসবে এবং এটি “ফলস পজিটিভ”। এক্ষেত্রে হয়ত এমনটাই হয়েছে। তিনি আরো বলেন এটি কোনমতেই প্রমান করেনা যে কমলার জুস বা কোমল পানীয়ে করোনাভাইরাস আছে।

মূলত কোভিড পজিটিভ আসলেই ১৪ দিনের ছুটি পাওয়া যায় আর সেই ছুটি পেতেই বাচ্চারা এই অভিনব কাজটি করছে।
র‍্যাপিড টেস্টে এমন ভুল রেজাল্ট দেখানোর এই খবর প্রকাশ হবার পরে টিকটক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও এটি নিয়ে মানুষ অনেক ভিডিও বানাচ্ছে, ভিডিওতে তারা দেখাচ্ছে যে কিভাবে কোমল পানীয়ের কারনে রেজাল্ট পজিটিভ আসছে। এইসব ভিডিওতে তারা #fakecovidtest হ্যাশটাগও ব্যবহার করছে।

যদিও এটি প্রমান করে না যে ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট একটি ত্রুটিযুক্ত এন্টিজেন টেস্ট, সঠিক নিয়ম না মানার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এটি নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ারো আহ্বান জানান তারা।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: , , ,