ঘুম ভাঙানিয়া পাখির জন্য ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ

রাবি প্রতিনিধি:

রাস্তার ধারে গাছতলায় পড়ে রয়েছে ছিন্ন মস্তক দেহ। মাথা থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। দেহের চারপাশে দড়ি বাঁধা পাঁচটি প্লাকার্ড। এতে রঙিন কলমে লেখা আছে ‘দায়িত্বহীনতা’, ‘অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন’, ‘অনিরাপদ ক্যাম্পাস’, ‘প্রশাসনের উদাসীনতা’ ও ‘অব্যবস্থাপনা’। পাশেই দুটি মেয়ে ইটের খোয়া দিয়ে ‘ঢাকা মেট্রো-ট’ নামের একটা ট্রাকের নাম সজ্জিত করছেন। মাঠের একপাশে পাথরের খোয়া দিয়ে বড় করে লেখা হয়েছে ‘হিমেল আমাদের ঘুম ভাঙানিয়া পাখি’।

মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি সেখানে ট্রাকচাপায় নিহত হন মাহমুদ হাসান হিমেল নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের নির্মাণসামগ্রী বহন করা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শরীর থেকে মাথা ছিন্ন তার।

এ ঘটনার প্রতিবাদে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে তৈরি করেছেন এক প্রতীকী প্রতিকৃতি। তিনদিন ধরে হিমেলের স্মরণে বিভিন্ন চিত্রকর্ম তৈরি করে আজ সেসব প্রদর্শন করেছেন তারা। প্রদর্শনীর কিছু চিত্রকর্মে ‘ছাইড়া যদি যাবি জড়াইছিলি কেন?’, ‘হিমেল তোর মাথা খাবো’, ‘ আমি এক হত ভাগীনি মা যে আমার সন্তানের মুখটি ছুঁয়ে শেষ আদরটাও করতে পারলাম না, একটি বার মা বলবি রে বাপ’ ইত্যাদি লেখা রয়েছে। এছাড়া অভিনয় শিল্পের মাধ্যমে প্রতিভাবান এক শিল্পীর নিজ শিল্পকর্মের দিকে ছুটে যাওয়ার বিষয়টি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।

এ দিকে এই প্রতিবাদী প্রদর্শনী ও প্রতিকৃতি দেখতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের একজন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ফাহির। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতিবাদ আগে কখনো দেখিনি। কত সুন্দর করে চিত্রকর্মের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন, দেখেও ভালো লাগছে।

এ সকল কর্মসূচির বিষয়ে শিল্পীরা বলেন, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা সারা বাংলাদেশকে জানিয়ে দিতে চাই যে সবকিছু শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে জানে। হিমেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানতে পারবে। এখানে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর ট্রাকচাপায় নির্মম মৃত্যু হয়েছে।

কর্মসূচির বিষয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী সাকিলা খাতুন বলেন, হিমেল চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন। সে হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মী, সচেতন নাগরিক হিসেবে তার পরিবার ও সমাজকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল তার। আমাদের প্রশাসনের অবহেলা, অসচেতনতার কারণে আমরা একটা তাজা প্রাণ হারিয়েছি। তার প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে আমরা এই শিল্পকলা, চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কাদিরুল ইসলাম কনক বলেন, আমরা চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী। আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব ছোট ভাই-বোন সবাই মিলে আমাদের যে শিল্প তার মাধ্যমে হিমেল হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার বন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ, আমাদের নিরাপদ সড়কের প্রতিবাদ ও প্রশাসনের কালো চোখ; এসব কিছুর প্রতিবাদ স্বরুপ আমাদের কর্মসূচি।

  •  
  •  
  •  
  •