এবার মঙ্গল জয়ের পথে আরবকন্যা

নিউজ ডেস্কঃ

বেশ কয়েকদিন ধরেই একটি খবর সবার নজরে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহের পথে যাত্রা করেছে। বেশ অবাকও হয়েছে বিশ্ববাসী। তেল আর গ্যাসের সাম্রাজ্যের দেশে এখন যোগ হলো নতুন পরিচয়।
জাপানের সবচেয়ে বড় রকেট বন্দর তানেগাশিমা থেকে উড্ডয়ন করে আমিরাতের স্যাটেলাইট হোপ মিশন। তবে এর থেকেও বেশি আলোচনা আর সমালোচনার বিষয় এই অভিযানের নেতৃত্বদানকারীকে নিয়ে। তিনি একজন নারী। তবে এটা তো নতুন নয়। এর আগেও মঙ্গলের মাটিতে পা রেখেছেন নারীরা। হ্যাঁ, তা হয়েছে তবে এবার যে নারীকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক।

আরব দেশগুলোতে তেল বা গ্যাসের সমৃদ্ধি ছাড়া উচ্চ শিক্ষারও তেমন সুযোগ নেই। সেখানে থেকে এই নারী চলেছেন মহাকাশ যাত্রায়। আজ আমরা সেই নারীর কথাই জানবো। চলুন জেনে নিন এই নারীর সফলতার কাহিনী-

এই মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরব আমিরাতে বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান সারাহ আল-আমিরি। তিনি দেশটির অ্যাডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। সারাহ হোপ মিশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। এই নবীন বিজ্ঞানী এরই মধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

হোপ মিশন পৃথিবী ছেড়ে যখন রওনা হয়েছে মঙ্গল অভিমুখে, তখন একই সঙ্গে সবার নজর সারাহ আল-আমিরির দিকেও। এই অগ্রগামী নারী ১৯৮৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৩২ বছর। মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকেই।

সারাহ আল-আমিরি পড়াশোনা করেছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহতে। তার বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স। তবে তার বরাবরই আগ্রহ ছিল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। তবে তখনো সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোনো মহাকাশ কর্মসূচিই ছিল না।

পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন এমিরেটস ইনস্টিটিউশন ফর এডভান্সড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে। সেখানে তিনি কাজ করেছেন দুবাইস্যাট-১ এবং দুবাইস্যাট-২ প্রকল্পে। এরপর তিনি যোগ দেন ইউএই‌’র পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ২০১৬ সালে তাকে এমিরেটস সায়েন্স কাউন্সিলের প্রধান করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের শুরু থেকে এর সঙ্গে জড়িত তিনি। এখন এই মিশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। ২০১৭ সালে তাকে একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। মহাকাশযানটির সফল উৎক্ষেপণের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সারাহ আল-আমিরি।

তিনি বলেন, ৫১ বছর আগে আমেরিকার চাঁদে পা রাখার মতোই তাদের দেশের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জের। সেটিও ২০ জুলাই তারিখেই ঘটেছিল। তিনি আনন্দ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বলেন, আজ আমি আনন্দিত কারণ আরব আমিরাতের শিশুরা ২০ জুলাই তারিখে ঘুম থেকে উঠে তাদের নিজস্ব অভিযানটি দেখতে পাবে, যা নতুন একটি বাস্তবতা।

বিবিসি জানায়, মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে পরীক্ষা করতে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে মিশন হোপ নামের এই মহাকাশযান। মহাকাশযানটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। এ রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

ওই একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কথা রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় এর আগে দুবার মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণের সময় পেছাতে হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযান সফল হলে তাদের নাম যুক্ত হবে বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের তালিকায়।

এ তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো গুটিকয়েক দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান করতে পেরেছে।মঙ্গলগ্রহে একসময় পানি ছিল বলে ধারণা করা হয়। সে গ্রহ কীভাবে আজকের ধূলি-ধূসর নিষ্প্রাণ লাল গ্রহে পরিণত হলো, তা জানাতেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীরা সাড়ে ছয় বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছেন।

আরো অনেক উপসাগরীয় দেশের মতোই সংযুক্ত আরব আমিরাতও এখন তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য একটি ভবিষ্যৎমুখী জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা। এ মহাকাশ প্রকল্প সে লক্ষ্যেই নেয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো একটি ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশের জন্য এ হবে এক অভাবনীয় সাফল্য। আর এ সাফল্যের পেছনের রূপকার এক নারী।

সুত্র: বিবিসি

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: