লাম্পি স্কিন ডিজিজ: লক্ষণ এবং প্রতিকার

তাসনিম ইলিন ইসলাম:

করোনা ভাইরাসের মতোই একটি সংক্রামক রোগ হচ্ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি। এটি গরু, মহিষের জন্য ভয়ংকর ভাইরাস জনিত রোগ। প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। কারণ- বছরের এই সময়গুলোতে মশা, মাছি অধিক বিস্তার লাভ করে। মশা, মাছির মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো বয়সী পশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

প্রথম বিস্তার লাভ:

১৯২১ সালে সর্বপ্রথম আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়াতে এই রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীতে মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে ইউরোপ এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে পরবর্তীতে।

বাংলাদেশ প্রথম সনাক্ত:

২০১৯ সালে চট্টগ্রামের এক খামারে প্রথম লাম্ফি স্কিন ডিজিজের দেখা মিলে। এরপরই মাঠে নামে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তদন্ত টিম। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে রোগের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছিল।

রোগের লক্ষণ:

শুরুতে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ করে যা আক্রান্তের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে দেখা যায়।
১) আক্রান্ত গরু বা মহিষ জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়।

২) জ্বরের সাথে মুখ এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়।

৩) শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া পিন্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

৪) ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে, শরীরের যেখানে ফুলে যায় তা ফেটে মাংসের টুকরোর মতো অংশ বের হয়- সাথে পুঁজ বের হয়।

৫)পাকস্থলী অথবা, মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু বা মহিষ পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

প্রতিকার:
১) আক্রান্ত গরুকে শেড থেক আলাদাস্থানে মশারী দিয়ে ঢেকে রাখা যাতে মশা, মাছি কামড়াতে না পারে। কারণ, আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশা, মাছি সুস্থ গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

২) নিয়মিত খামার এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

৩)রক্ষণাবেক্ষণকারীর পোশাক থেকে সুস্থ গরুর দেহে রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে, তাই পৃথক পোশাক পরিধান করে সুস্থ এবং আক্রান্ত গরুদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

৪) আক্রান্ত গরুর খাবার, ব্যবহার্য জিনিস সুস্থ গরুর কাছে না আনা।

৫) আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহক কারণ- আক্রান্ত গরুর সিমেনেও এই রোগ বিদ্যমান।

৬) আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিতে হবে এবং মাটি চাপা দিতে হবে।

৭)ক্ষতস্থান টিনচার আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার রাখা।

চিকিৎসা: আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিরোধ: এই রোগ মূলত আমদানিকৃত গরুর মাধ্যমে ছড়ায়। তাই- গরু, মহিষ আমদানি করার পর কোয়ারান্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

  •  
  •  
  •  
  •