ডোপামিন ডিটক্স; বদঅভ্যাস নিয়ন্ত্রনের কার্যকরী কৌশল

এস এম আবু সামা আল ফারুকীঃ আমাদের কারোরই একঘেয়ে কোনো কাজ পছন্দ নয়। ছোটবেলায় স্কুলে ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাস করতে এবং কিছু কিছু বিষয় পড়তে আমাদের একদমই ভালো লাগতো না। বয়স বাড়ার সাথে সাথেও এরকম বেশ কিছু জিনিস থাকে যা আমরা করতে আগ্রহ বোধ করি না কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে করতে হয়। এর মধ্যে নিজের জন্য উপকারী কাজগুলোও থাকে। যেমন প্রতিদিন শরীরচর্চা করতে আগ্রহী মানুষ খুব কমই আছে।

তবে এই কাজগুলো ভালো না লাগার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। যে কাজ করতে আমাদের ভালো লাগে না সেই কাজগুলো আমাদের মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমান ডোপামিন ক্ষরণ করে না ফলে মস্তিষ্ক এই কাজের প্রতি সেভাবে আগ্রহ দেখায় না।

এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে ডোপামিন কি এবং মস্তিষ্কে এর ভূমিকা কি?

আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে। ডোপামিন হল মস্তিষ্কে উৎপন্ন তেমনই একটি রাসায়নিক উপাদান বা বিজ্ঞানের ভাষায় নিউরোট্রান্সমিটার যা শিখন,কোনো কাজে আগ্রহ জাগানো, ঘুম, মানসিক অবস্থা ও মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

এই ডোপামিনকে মস্তিষ্কের পুরষ্কার সিস্টেম বলা হয়। কোনো কাজে যদি ডোপামিন বেশি ক্ষরণ হয় তবে মস্তিষ্ক সেই কাজ বার বার করতে উৎসাহিত করে এবং আমরা সেই কাজের মাধ্যমে আনন্দ পাই। তবে যে কাজগুলো ডোপামিন বেশি ক্ষরণ করে এর মধ্যে আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলোই বেশি থাকে। বর্তমানে করোনা মহামারীতে আমরা সবাই ঘরবন্দী জীবন কাটাচ্ছি। ফলে মুঠোফোনের ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই মুঠোফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের পেছনে রয়েছে এই ডোপামিন।

মুঠোফোনের ব্যবহারের ফলে যখন মস্তিষ্কে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ডোপামিন ক্ষরণ হতে থাকে তখন মস্তিষ্ক সেই অতিরিক্ত ডোপামিনের মাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে যে কাজগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম ডোপামিন ক্ষরণ হয় সেই কাজ গুলো যেমন পরিবারের সাথে আড্ডা, লেখালেখি করা,পড়াশোনা করা, ছবি আঁকা এগুলো করতে মস্তিষ্ক সাড়া দিতে চায় না। কারণ মস্তিষ্কের তখন অতিরিক্ত ডোপামিনে অভ্যাস হয়ে গেছে।

বিভিন্ন প্রাণঘাতী মাদক ও বর্তমান ইন্টারনেট যুগের ভয়াল থাবা পর্নোগ্রাফি ও বাচ্চাদের ভিডিও গেমিং এগুলোতে মস্তিষ্কে যে বিপুল পরিমান ডোপামিন উৎপন্ন হয়।  ফলে এই মারাত্মক কু-অভ্যাসগুলো থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তবে যেকোন কিছুই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। গবেষকরা তাই ডোপামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনের জন্য “ডোপামিন ডিটক্স”
বলে একটি কার্যপদ্ধতির পরিচিতি ঘটান। এটি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। মুসলিম সম্প্রদায়ে রমযান মাসে যেমন পানাহার থেকে বিরত থাকে ঠিক তেমনি যে কাজগুলোতে আমাদের অতিরিক্ত ডোপামিন ক্ষরণ হয় যেমন গান শোনা, ফোন চালানো, গেম খেলা, ফেসবুক ব্রাউজ করা ইত্যাদি থেকে নিয়ম করে বিরত থাকতে হবে।

বিরত থাকতে থাকতে একসময় যখন মস্তিষ্কের ডোপামিন সহ্যের মাত্রা কমে আসবে তখন যে সমস্ত কাজে কম ডোপামিন ক্ষরণ হয় যেমন পড়াশোনা, গল্প লেখা, ছবি আঁকা, শরীরচর্চা করা ইত্যাদি কাজগুলোর প্রতি মস্তিষ্কে আগ্রহ তৈরি হবে৷ কারণ ঐ কম মাত্রার ডোপামিন তখন মস্তিষ্কে অনেক বেশি মনে হবে।

তবে বলা সহজ হলেও কাজটি করা কঠিন। কারণ বদঅভ্যাস থেকে বিরত থাকা মোটেও সহজ নয়। তাই শুরুতে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন নির্ধারণ করতে হবে যে দুইদিন যে কাজগুলোতে নিজের ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে দিন বৃদ্ধি করতে হবে।

অন্য একটি কার্যকরী উপায় হল কঠিন কাজের পর মস্তিষ্কের পছন্দনীয় কোনো কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেওয়া। যে কাজগুলো করতে বেশি পরিশ্রম হয় সেই কাজের পর যদি অতিরিক্ত ডোপামিন ক্ষরণকারী কাজ যেমন কিছুক্ষণ গেম খেলা বা গান শোনা হয় তবে মস্তিষ্ক ওই অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজের উপর মনোযোগ বাড়াবে কারণ কাজের শেষে তার জন্য রয়েছে ডোপামিনের পুরস্কার।

তবে মজার ব্যাপার হল ডোপামিন ডিটক্স কোনো বিজ্ঞান স্বীকৃত উপায় নয়। এটি বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও ডাক্তারদের একটি প্রস্তাবিত মেন্টাল ট্রেইনিং পদ্ধতি৷ তবে তাতে যদি নিজের জীবনধারা পালটানো যায় তবে চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?

সূত্রঃ মেডিকেল নিউজ টুডে, দ্যা হিন্দু টাইমস

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: , ,