
ডেঙ্গুর সফল নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী যে কার্যক্রম

জেবিন তাসমিনঃ
সম্প্রতি মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে মানুষের চলাচল, বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন এডিস ইজিপ্টি মশার বিস্তারকে বাড়িয়েছে। ফলাফস্বরূপ পরবর্তীকালে, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ডেঙ্গু জ্বর এখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর মশাবাহিত ভাইরাল রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়৷ বিগত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী ঘটনা ৩০ গুণ বৃদ্ধির সাথে এটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি মশাবাহিত রোগের বিস্তার রোধে নজির বিহীন ভূমিকা পালন করছে বিশ্বব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম।
Monash বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিশ্বব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে যা বিশ্ব সম্প্রদায়কে ডেঙ্গু, জিকা, ইয়োলো ফিভার এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে। এডিস এজিপ্টি মশা ওলবাচিয়া নামক প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বহন করে, এগুলি ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং ইয়েলো ফিবারের মত ভাইরাস ছড়াতে মশার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
মশা যেভাবে রোগ ছড়ায়:
মশা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কামড়ের সময় ওই ব্যাক্তির কাছ থেকে ভাইরাস ধারণ করে। যখন তারা আবার কামড়ায়, তারা পরবর্তী ব্যক্তির কাছে ভাইরাসটি প্রেরণ করতে পারে। এভাবেই মশাবাহিত রোগ ছড়ায়। মশা স্বাভাবিকভাবে ভাইরাস বহন করে না, এরা শুধুমাত্র সংক্রামিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এগুলি পেতে পারে। যেহেতু শুধুমাত্র স্ত্রী মশাই মানুষকে কামড়ায়, তাই শুধুমাত্র স্ত্রী মশাই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এডিস এজিপ্টি মশা হল ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং হলুদ জ্বরের ভাইরাসের প্রধান বাহক।
এই কার্যক্রম যেভাবে কাজ করে :
ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং হলুদ জ্বর সহ মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ রোধ করার একটি উপায় তৈরি করেছেন।
এই পদ্ধতির অধীনে, গবেষকরা পরীক্ষাগারে Aedes aegypti মশার মধ্যে wolbachia ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করান এবং তাদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেন। Wolbachia-সংক্রমিত মশা যখন বংশবৃদ্ধি করে, তখন ব্যাকটেরিয়া বহনকারী মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেই এলাকায় ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং হলুদ জ্বর সহ মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়।
wlbachia কী এবং এই কার্যক্রম কী পুরোপুরি নিরাপদ:
Wolbachia হল অত্যন্ত সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যা কিছু মশা, ফলের মাছি, মথ, ড্রাগনফ্লাই এবং প্রজাপতি সহ ৫০ শতাংশ কীটপতঙ্গের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে দেখা যায়।
Wolbachia পোকামাকড়ের কোষের মধ্যে বাস করে এবং একটি পোকামাকড়ের ডিমের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে চলে যায় এবং Aedes aegypti মশা সাধারণত ওলবাচিয়া বহন করে না, যদিও অন্যান্য অনেক মশা তা বহন করে।
Wolbachia পদ্ধতি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ এটি মানুষ, প্রাণী এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ।
কার্যক্রমের সফলতা ঃ
মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ কমাতে কর্মীগণ এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে সফলতার সাথে। সুদূর-উত্তর কুইন্সল্যান্ড এখন ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু মুক্ত এলাকা।
ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়া এবং হলুদ জ্বর সহ মশাবাহিত রোগ দমনে বিশ্বব্যাপী এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.