বাকৃবিতে গাজরের মূল ও বীজ উৎপাদনের আধুনিক কলাকৌশলের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গাজরের মূল ও বীজ উৎপাদনে আধুনিক কলাকৌশলের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব খামারে এই মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বীজ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মাঝে গাজর বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশে গাজর উৎপাদনে অজৈবিক প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে খরা অন্যতম যা উল্লেখযোগ্যহারে দেশে গাজরের উৎপাদন কমায় এবং কৃষকরা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এভাবে বাজারে গাজরের সহজলভ্যতা কমে যাওয়ায় মানুষের খাদ্য তালিকার ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরই পরিপেক্ষিতে খরা সহনশীল ও উচ্চ পুষ্টিগুন সম্পন্ন বিভিন্ন রঙের গাজরের জাত নির্বাচন এবং গাজরের অধিক উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ হারুন অর রশিদ। দেশে গাজরের বীজের চাহিদার সিংহভাগ বীজই দেশের বাহির থেকে (চীন, জাপান, ভারত) আমদানী করতে হয়। আবার আমদানীকৃত বীজের অধিকাংশ জাতই সংকরায়িত (হাইব্রিড) হওয়ায় সেসব বীজ থেকে উৎপাদিত গাজর থেকে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। অধিকন্তু এই হাইব্রিড জাতসমুহের বীজের মূল্য কেজি প্রতি প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক ড. হারুন। ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমান বৈদেশীক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়।
এই অনুষ্ঠানে গাজর ও গাজরের বীজ কিভাবে উৎপাদন করতে হয় সে সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয় এবং গাজরের পুষ্টি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাছাইকৃত জাত থেকে বীজ উৎপাদিত হলে দেশের বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা এই জাতগুলো থেকে নিজেরাই বীজ উৎপাদনে সক্ষম হবে এবং দেশের গাজরের বীজ এবং গাজরের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
দিনব্যাপী এই মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান। তিনি বলেন, দেশের খরা প্রবণ এলাকাগুলোতে অধিক গাজর উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টির চাহিদা এবং কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। খাদ্যঘাটতি নিরসনে নিশ্চিতভাবেই এই ধরনের গবেষণা প্রকল্পের বিকল্প নেই। তাই তিনি এই প্রকল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল গবেষককে অভিনন্দন জানান এবং প্রকল্পটির সফলতা কামনা করেন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফিলিপ সাইমন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গাজর উৎপাদনে বর্তমান চাহিদা এবং উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে যেখানে অধিকাংশ গাজর উৎপাদিত হয় সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে খরার কারণে গাজর উৎপাদন ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচেছ। বাংলাদেশে চলমান এই প্রকল্পের মাধ্যমে খরাসহিষ্ণু গাজরের জাত নির্বাচন করে সেগুলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের খরাপ্রবণ এলাকায় চাষ করা হবে বলেও জানান এই গবেষক।
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম রাব্বানী এর সভাপতিত্ত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পটির উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম.এ. রহিম, বাকৃবি’র কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, এমএস ও পিএইচডি ফেলো এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
ইউএসডিএ/এআরএস-ইউএসএআইডি, ইউএসএ এর যৌথ অর্থায়নে ফিড দ্যা ফিউচার কারেন্ট এবং ইমার্জিং থ্রেটস টু ক্রপস ইনোভেশন ল্যাব এর আওতায় এই প্রকল্পটি যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে পরিচালিত হচ্ছে।
You must be logged in to post a comment.