বিগত বছগুলোর তুলনায় বর্তমানে সর্বাধিক উষ্ণ সময় পার করছে পৃথিবী

সাবরিন জাহান
গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন ক্রমেই বেড়েই চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং জলবায়ু পরিবর্তনেরই একটি বিশেষ ঘটনা যা সাধারণত গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে হয়ে থাকে। গ্রিনহাউস হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড,মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্যাস। আইপিসিসি (ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এর জলবায়ু রিপোর্ট জানাচ্ছে বিগত ১২৫,০০০ বছরের তুলনায় এখন পৃথিবী সসর্বাধিক উষ্ণ।
জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর আধুনিক সমাজের অব্যাহত এই নির্ভরতাই বিশ্বকে এমন দ্রুত গতিতে উষ্ণ করছে যা গত ২০০০ বছরে নজিরবিহীন। আর এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই রেকর্ড পরিমাণ খরা, দাবানল এবং বন্যার গ্রাস দেখছে বিশ্ববাসী। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) বলছে এমন চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং গ্রহটির ভবিষ্যৎ এখন মানবজাতির উপর নির্ভরশীল।
এ সম্বন্ধে কানাডার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জুয়েবিন ঝ্যাং বলেছেন, “প্রমাণ এখন সর্বত্র রয়েছে। যদি আমরা এটি নিয়ে কাজ না করি, পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ হতে চলেছে।” বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করণ এবং বহু প্রতীক্ষিত ২০১৫ এর প্যারিস জলবায়ু চুক্তির নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব যদি বিশ্বব্যাপী নির্গমন ২০৫০ সালের কাছাকাছি শূন্যে পৌঁছায়,বলেন ফ্রান্সের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ভ্যালেরি ম্যাসন-ডেলমোট।
একটি প্রতিবেদনে জানা যায়,পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্কটিকের সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ গত এক দশকে কমেছে অনেক গুণ। এবং মহাসাগরগুলি এমন গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। বর্তমানে অসহনীয় তাপ, অত্যধিক বৃষ্টিপাত এবং খরা আঘাত করছে পৃথিবীজুড়ে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ -পশ্চিম আফ্রিকা চরম খরার সম্মুখীন।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের এই প্রভাব ধ্বংস করবে ভবিষ্যতকেও। বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের স্তর আগামী ২০০০ বছরে ২-৩ মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে, যদি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়ে , যা লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাসকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও আইপিসিসি তিন দশক ধরেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে, তবুও উন্নত দেশেগুলোর সরকার এখনও গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।
“জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে, এবং মানুষ আসলে এটি অনুভব করে,” ঝ্যাং বলেন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ এখন যা অনুভব করে, প্রতিবেদনটি তার বৈজ্ঞানিক বৈধতাই প্রদান করে।