দেশের পুকুরে প্রথমবারের মত চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ অবমুক্ত
নিউজ ডেস্কঃ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নতুন উদ্ভাবিত চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ অবমুক্ত করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহে ভার্চুয়ালি রুই মাছের জাতটি মৎস্য অধিদপ্তর ও কয়েকজন হ্যাচারির মালিকদের কাছে অবমুক্ত করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ।
বিএফআরআই’র ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ভার্চুয়াল ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউিটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ।
বিএফআরআই জানায়, বর্তমানে মাছ চাষ প্রায় সম্পূর্ণভাবে হ্যাচারি উৎপাদিত পোনার ওপর নির্ভরশীল। তবে হ্যাচারিতে উৎপাদিত রুই মাছের পোনার কৌলিতাত্ত্বিক অবক্ষয় ও অন্তঃপ্রজননজনিত সমস্যা মৎস্য চাষ উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৌলিতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে রুই মাছের নতুন উন্নত জাত উন্নয়নে গবেষণা চালানো হয়। এক্ষেত্রে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও হালদা নদীর প্রাকৃতিক উৎসের রুই মাছ সংগ্রহ করে ধারাবাহিক গবেষণায় ২০২০ সালে রুই মাছের চতুর্থ প্রজন্ম উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।
বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জোনায়রা রশিদ বলেন, ভিন্ন ভিন্ন নদীর উৎস থেকে সংগৃহীত স্থানীয় জাতের রুই মাছের মধ্যে দ্বৈত অ্যালিল ক্রসিংয়ের মাধ্যমে ৯টি গ্রুপ থেকে প্রথমে বেইস পপুলেশন তৈরি করা হয়। এরপর বেইস পপুলেশন থেকে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে রুই মাছের উন্নত জাতের প্রথম প্রজন্মের মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা বেইস পপুলেশন থেকে ৭.৫ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল।
পরবর্তীতে সিলেকটিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে রুই মাছের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের যথাক্রমে ১২.৩৮ শতাংশ ও ১৬.৮৩ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে উন্নত জাতের চতুর্থ প্রজন্মের নতুন রুই মাছের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, উন্নতজাতের চতুর্থ প্রজন্মের ‘সুবর্ণ রুই’ মাছ স্বাদু পানি ও আধা-লবণাক্ত পানির পুকুর, বিল, বাঁওড় এবং হাওরে চাষ করা যাবে। তাছাড়া উন্নত এ জাতের রেণু পোনা হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করে নার্সারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেকেই লাভবান হতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে এটি যেহেতু উদ্ভাবন হয়েছে সেজন্য আমরা এর নাম দিয়েছি ‘সুবর্ণ রুই’। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে যেহেতু ‘সুবর্ণ’ নামের সামঞ্জস্য রয়েছে, আমরা আশা করছি মাঠপর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সহজেই সম্প্রসারিত হবে। সেই সঙ্গে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।