বিশ্বের প্রথম ‘জীবন্ত’ রোবট, জন্ম দেবে সন্তানও!

নিউজ ডেস্ক:

মাণবিক গুণাবলি সম্পন্ন এবার বিশ্বের প্রথম ‘জীবন্ত’ রোবট তৈরি করার দাবি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। এর নাম তারা দিয়েছেন জেনোবটস।

আফ্রিকান নখরযুক্ত ব্যাঙের (জেনোপাস লেভিস) স্টেম সেল থেকে এ রোবট তৈরি করা হয়েছে। এক মিলিমিটারের চেয়েও কম প্রশস্তের (দশমিক শূন্য ৪ ইঞ্চি) জেনোবটসের নামও দেওয়া হয়েছে আফ্রিকার ব্যাঙের নাম থেকেই। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই রোবট বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এই প্রজনন এমনভাবে ঘটে, যা আগে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।গত বছর গবেষণা করার সময় বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ক্ষুদ্র কোষগুলো নড়াচড়া করতে পারে। এ ছাড়া একত্রে কাজ করার পাশাপাশি নিজে থেকেই সেরে উঠতে পারে।

এই রোবট নিয়ে গবেষণায় কাজ করেছেন ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েসিস ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যালি ইন্সপায়ারড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষকেরা।

বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা বলছেন, জীবন্ত রোবটগুলো পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এগুলো সহজে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায় এবং বৈজ্ঞানিক নীতিনৈতিকতা মেনেই তৈরি করা হয়েছে।

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানী স্যাম ক্রাইগম্যান বলেন, ‘বড় শিল্প বা ধাতব কাজের উপযোগী বড় যন্ত্রকে রোবট মনে করে মানুষ। তবে রোবট প্রকৃতপক্ষে শারীরিক ও দরকারি কাজ করে এমন যন্ত্রকে বোঝায়। ক্ষুদ্র এ রোবট কী ধরনের কাজ করতে পারে, তা আমরা বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, এটি পাত্র পরিষ্কারের কাজ করতে পারে।”

টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেন ডিসকভারি সেন্টারের পরিচালক ও জীববিজ্ঞানী মাইকেল লেভিন বলেন, “ব্যাঙের প্রজনন করার সাধারণ পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু যখন স্টেম সেল ভ্রূণ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় এবং তাদের নতুন পরিবেশে প্রজননের সুযোগ দেওয়া হয়, তারা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে।”

ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং রোবটিকস বিশেষজ্ঞ জোশ বনগার্ড বলেছেন, “স্টেম সেল বিভিন্ন ধরনের কোষে বিকাশ করার ক্ষমতা রাখে। জেনোবটস তৈরিতে ব্যাঙের ভ্রূণ থেকে স্টেম সেল আলাদা করে প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো জিনগত পরিবর্তন আনা হয় না। এটি নিজে থেকেই কাজ করতে পারে। তাই এটি একদিকে যেমন রোবট, তেমনি এটি জীবও বটে। যেহেতু এটি জেনেটিক্যালি অপরিবর্তিত ব্যাঙ কোষ থেকে তৈরি। তিন হাজার কোষ ব্যবহার করে তৈরি গোলক আকৃতির এ রোবট বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তবে এটা ঘটে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে।”

তবে এই প্রযুক্তি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আণবিক জীববিজ্ঞানের নানা পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে একে নানা কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে স্ব-প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম এ ধরনের প্রযুক্তি উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3