৪০০ বছর ধরে “তোপকাপি প্রাসাদে” অবিরত কোরআন তিলাওয়াত

নিউজ ডেস্কঃ ১৫১৭ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে চার’শ বছর ধরে তোপকাপি প্রাসাদে দিন-রাত অবিরতভাবে কোরআন তিলাওয়াত হচ্ছে।

১৯২৩ সালে তুর্কি রিপাবলিক ঘোষণার পর থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তা বন্ধ ছিল। মধ্যবর্তী এই ৪৬ বছর ছাড়া সাড়ে চার শ বছরেরও বেশি সময় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াত হচ্ছে তোপকাপি প্রাসাদে।

কোরআনের প্রতি যে ভালোবাসার কারণে চার শ নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁর তিলাওয়াত হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা।

সুলতান প্রথম সেলিম, যিনি নিজেকে মক্কা-মদিনার সেবক হিসেবে পরিচয় দিতেন। যখন মামলুকদের পরাজিত করে মিসর জয় করেন, তখন মক্কা ও মদিনা তাঁর শাসনাধীন হয়। মক্কা ও মদিনার তৎকালীন আমির শরিফ আবু নুমাই ইবনে আবুল বারাকাত সুলতান সেলিমের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন এবং পবিত্র দুই নগরীর চাবিও পাঠিয়ে দেন। শরিফ আবু নুমাই চাবির সঙ্গে ইসলামের প্রাথমিক যুগের কিছু নিদর্শনও পাঠান। দাবি করা হয়, এগুলো মহানবী (সা.) ও তাঁর কয়েকজন সাহাবির স্মৃতিস্মারক।

মক্কা-মদিনার আমিরের আনুগত্য ও পবিত্র দুই মসজিদের খুতবায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সুলতান প্রথম সেলিম অত্যন্ত আনন্দিত হন। তিনি মিসরে থাকতেই শরিফ আবু নুমাইয়ের উদ্দেশে বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন পাঠান। ব্যক্তিগত উপহারের পাশাপাশি তিনি মক্কা ও মদিনার অধিবাসীদের জন্য সোনার দুই লাখ টুকরা (সম্ভবত মুদ্রা) ও খাদ্যশস্য ভর্তি একাধিক জাহাজ প্রেরণ করেন।

সুলতান সিদ্ধান্ত নেন ‘স্মৃতিস্মারক’গুলো ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসবেন। এগুলো মূলত মামলুক শাসকদের সংরক্ষণে ছিল এবং ইস্তাম্বুলে আনা কিছু স্মারক কায়রো ও সিরিয়া থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সুলতান স্মৃতিস্মারক জাহাজে ওঠানো থেকে ইস্তাম্বুলে পৌঁছানো পর্যন্ত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিলেন। সুলতান নিজেও তিলাওয়াতে অংশ নেন। ইস্তাম্বুলে পৌঁছানোর পর তোপকাপি প্রাসাদে নিজের একান্ত কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া কক্ষে স্মারকগুলো সংরক্ষণ করেন। তিনি সেখানে সার্বক্ষণিক কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দেন।

তুর্কি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর প্রায় ৫০ বছর কোরআন তিলাওয়াত বন্ধ ছিল। ১৯৬৯ সালে তুর্কি ঐতিহাসিক ও সংগীতজ্ঞ ইলমাজ ইজতুনা—যিনি ‘মানুষের ভালোবাসার স্রষ্টা’ নামে পরিচিত, তিনি যখন ‘ডেপুটি’ নির্বাচিত হন, তখন সরকারের সমর্থনে পুনরায় কোরআন তিলাওয়াতের ধারা শুরু হয়। বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3

Tags: