বাংলাদেশ কি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে!

নিউজ ডেস্কঃ
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্টলাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূতত্ত্বের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি লাইন বলা হয়। ফল্টলাইন দিয়ে ২ প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
এ বিষয়ে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং মিয়ানমারের কিছু অংশে প্রচণ্ড শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলটির বিস্তার প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। এতে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকী প্রকাশিত ওই গাবেষণায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশসহ ভারত ও মিয়ানমারের কিছু অংশজুড়ে একটি সুবিশাল চ্যুতির (ফল্ট) অবস্থানের কারণে এ এলাকায় রিখটার স্কেলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এ রকম দুর্যোগে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ফল্ট এলাকার আশপাশের ১০০ কিলোমিটার এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভূতত্ত্ব) ও ভূমিকম্প গবেষক আক্তারুল আহসান বলেন, ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প হবে কি না, এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে, গবেষণা সেটাই বলে। আমরা যেসব ডাটা অ্যানালাইসিস করেছি তাতে জানা গেছে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকেম্পর আশঙ্কা রয়েছে।’
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গ্লোবাল আর্থকোয়েক মডেল প্রকাশিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে বুয়েটের এ অধ্যাপক আরও বলেন, বাংলাদেশের উত্তরে ভুটান এলাকায় ২৫ কিলোমিটার লম্বা একটি ফাটলরেখা আছে। সেখানে যেকোনো সময় ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
বাংলাদেশের নর্থ-ইস্টার্ন জোনে ‘ডাউকি ফল্ট’ রয়েছে, সিলেট-শ্রীমঙ্গল অঞ্চল এবং মানিকগঞ্জে আরেকটা ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া চিটাগং জোনেও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা মিয়ানমার পর্যন্ত চলে গেছে। এই জায়গাটাতে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ হচ্ছে যে অঞ্চলগুলোতে পাহাড় হয় সে অঞ্চলগুলো পাহাড় হয় একটা সংকোচন শক্তির জন্য বা একটা স্লাইডিং বা ফল্টের জন্য। তুর্কিতে যেটা হয়েছে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমাদের সক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা আছে। কারণ হিসেবে তারা রানা প্লাজাসহ বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের দুর্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলোও অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে।
বছর কয়েক আগে এক জরিপে জানানো হয়, বাংলাদেশে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার প্রায় ৭২ হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা রাতের বেলা হলে নগরীর ৯০ হাজার মানুষ হতাহত হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে।
গবেষক আক্তারুল আহসান বলেন, ভূমিকম্পের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে তেমন প্রস্তুতি নেই। যদি বড় রকমের ভূমিকম্প হয়, তাহলে যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে সামাল দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগে প্রফেসর মোহাম্মদ শফি-উল্লাহ বলেন, ভূমিকম্প হলে সেটা সামাল দেয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের খুব একটা নেই। এই খাতে বিনিয়োগ করলে সেটার তাৎক্ষণিক ফল দেখা যায় না। তাই আমাদের মতো দেশের ক্ষেত্রে যেটা হয়, তা হলো যখন যেটা দরকার সেখানে বিনিয়োগ করা হয়।