বগুড়ায় দুই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বিয়ে দিল টিএমএসএস

সারাদেশ:

বগুড়ার টিএমএসএস অটিজম ও প্রতিবন্ধী স্কুল এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বগুড়ায়। ঐ দুই শিক্ষার্থীর বিয়ে থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান ও আবাসনের ব্যবস্থা করে দিলো কর্তৃপক্ষ।

গত রোববার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। । পরদিন সোমবার দুপুরে বিয়ে পড়ানোসহ অতিথি আপ্যায়নের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বিয়ের এই উৎসব। স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নাচ, গান পরিবেশনসহ আনন্দে মেতেছিল স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আশেপাশের শত শত মানুষ।শুরু হয় এক প্রতিবন্ধী জুটির বিবাহিত জীবন।এ বিয়ের উৎসবে মেতেছিলেন প্রায় ১২শ’ মানুষ।

বর ইমদাদুল হকের বাড়ি বগুড়া সদরের চাঁদমুহা হাট পলাশবাড়ী গ্ৰামে। তার বাবা আব্দুল জলিল দিনমজুর। তার মা রোকেয়া বেগম মারা গেছেন অনেক আগেই।

এদিকে কনে সোমানা বেগম বগুড়া সদরের হাজরা দীঘি আশোকোলা দক্ষিণপাড়ার ইসলাম উদ্দিন ও মনোয়ারা বেগমের মেয়ে। ইসলাম উদ্দিন পেশায় ভিক্ষুক।

বর কনে দুজনেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় তাদের বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে ছিল। অবশেষে টিএমএসএস প্রতিবন্ধী স্কুল কর্তৃপক্ষ ৫ বছর যাবত তাদের সব দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই স্কুলেই তারা লেখাপড়া ও কারিগরি শিক্ষা গ্ৰহণ করে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।

বছর তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ সোমানা খাতুনের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন এমদাদুল হক। এখানেই তাদের তিন বছরের প্রেম হয়ে উঠেছে পরিণত। তাই নতুন ঘর বাঁধলেন ২৩ ও ২০ বছর বয়সী এমদাদ-সোমানা।

বিয়ের পিঁড়িতে বসে আনন্দে আত্মহারা এমদাদ-সোমানা জানিয়েছেন, তারা অত্যন্ত আনন্দিত। তারা সুখে শান্তিতে সংসার জীবন করবে।

টিএমএসএস অটিজম ও প্রতিবন্ধী স্কুল এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক সাঈদ যুবায়ের পিনু জানান, এই ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশে কোন প্রতিবন্ধী জুটির বিয়ে দেশে এটিই প্রথম। আয়োজনে কোনো ধরনের কমতি ছিল না। ‌‌গায়ে হলুদ, নাচ-গান, অতিথি আপ্যায়নসহ নব দম্পতির বসবাসের জন্য আবাসন এবং কাজের ব্যবস্থা সবই করেছে টিএমএসএস। প্রতিবন্ধীদের জন্য এই উদ্যোগ একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

টিএমএসএস’র উপদেষ্টা আয়েশা বেগম জানান, এই বিয়ের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ ধরনের একটি জুটি যাদের বাবা-মায়ের মতো লালন-পালন করে আসছে টিএমএসএস। আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো ওদেরও স্বপ্ন আছে, আছে মন। ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। তাই টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক ড. হোসনে আরা বেগম বিষয়টি জানতে পেরে জাঁকজমকপূর্ণ এই বিয়ের আয়োজন করেছেন। যাদের কেউ নেই তাদের পাশে আমরা আছি এই প্রত্যয় নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনের এই বিয়ের উদ্যোগই শুধু নেয়নি। তাদের আবাসন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সংসার জীবন যেন সুখময় হয় সেজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন সংগঠনটির এই উপদেষ্টা।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাসহ সার্বিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব পালনকারী টি এম এস এস রিলিজিয়াস কমপ্লেক্স, বগুড়া এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা রাকিবা সুলতানা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছর তারা পড়ালেখা, এডিএল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জয় করেছেন নিজেদের প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিষ্ঠানেই পেয়েছেন চাকরি, বাঁধলেন নতুন সংসার, এখানেই মিললো আবাসন। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বপ্ন এখন এমদাদ- সোমানার চোখজুড়ে।

  •  
  •  
  •  
  •  
ad0.3