বাকৃবিতে বাউব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট নামে হাঁসের জাত উদ্ভাবন

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ

দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে সংকরায়নের ফলে একটি কাঙ্খিত উৎপাদনশীল সংকর জাতের হাঁস উদ্ভাবিত হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ময়মনসিংহে। প্রথমিকভাবে এটির নাম দেওয়া হয়েছে বাউব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট (BAU Black and White)। বাকৃবি পশুপালন অনুষদের একদল গবেষক র্দীঘদীন গবেষণা করে সম্ভাবনাময় এই সংকর জাতের বাংলাদেশী হাঁস উদ্ভাবন করেন।

গবেষকদলের প্রধান পশুপ্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা সবুজ বাংলাদেশকে বলেন নতুন এই হাঁসের জাতটি অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদনে সক্ষম। ১০-১২ সপ্তাহ বয়সে এর দৈহিক ওজন ২.২-২.৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং বার্ষিক ডিম উৎপাদন ২৫০-২৬০ টি। মাংস উৎপাদন ক্ষমতা আমদানীকৃত পেকিন জাতের প্রায় সমকক্ষ। দেশীজাতের সাথে সংকরায়নের ফলে উদ্ভাবিত হাঁসটি আমাদের দেশের জলবায়ূ ও আবহাওয়া উপযোগী এবং রোগবালাই অনেক কম। হাঁসের মাংসের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় সংকরজাত যা প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান।

ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম অভিযোগ করে বলেন গবেষণা কার্যক্রমের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় নিষিক্ত ডিম ও ১ দিন বয়সের বাচ্চার মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ সংকর জাতের হাঁসটি অনুমতি ছাড়াই খামারীদের নিকট চলে যায় এবং তাদের দেয়া মনগড়া কাকলী, ব্লাক হোল ইত্যাদি নামকরন করে বাজারজাতকরনের জন্য বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালায় যা গবেষকদলের নজরে আসে। এটা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত এবং কপিরাইট বা পেটেন্ট আইনের সম্পূর্নরুপে পরিপন্থি বলে জানান গবেষকদলটি। বাউব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট বাকৃবি, ময়মনসিংহ থেকে উদ্ভাবিত একটি সংকর জাতের হাঁস। সুতরাং এর স্বত্ত্ব শুধুমাত্র বাংলাদেশ কৃষিবিদ্যালয়ের, অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নয় বলে তিনি দাবী করেন।

এই গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক প্রফেসর ড. মোঃ শওকত আলী বলেন, দেশে হাঁসের মাংসের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিগত কয়েক বছর আগে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর পেকিন জাতের হাঁস চীন থেকে আমদানী করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায় এর কাঙ্খিত উৎপাদন পেলেও অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে (semi-intensive) এর উৎপাদনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতা অনেকটা কম পরিলক্ষিত হয় এবং প্রান্তিক খামারী পর্যায়ে লালন-পালন লাভজনক নয়। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সাল থেকে অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাত তৈরীর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাউব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট জাতটি উদ্ভাবিত হয় যা কৃষক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা যায়, অদ্যাবদি কোনো খামারী বা হ্যাচারী মালিকের সাথে উক্ত সংকরজাতের হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন এবং বিপণন সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায়িত্ব প্রদান বা চুক্তি করা হয়নি। তাছাড়া উদ্ভাবিত সংকর জাতের হাঁসের কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলী নিরুপন, জিন ফিক্সেশন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিজ্ঞান ভিত্তিক কার্যাবলী সম্পন্নের জন্য অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন। জাত উদ্ভাবনের সকল প্রক্রিয়া সমাপনান্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন স্বাপেক্ষে জাতটি খামারী পর্যায়ে যথাসময়ে হস্তান্তর করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •